পরকীয়া সম্পর্ক অপরাধ নয়, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

পরকীয়া সম্পর্ক কোনওভাবেই অপরাধ নয়, বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে এই কথাই জানাল দেশের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ।
এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ১৮৬০ সালের ঔপনিবেশিক আইন, যাতে পরকীয়া সম্পর্ককে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও স্বৈরাচারী আইন। এই আইন বাতিল করা হল। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, কোনও পুরুষ কোনও বিবাহিতা মহিলার সাথে যৌন সংসর্গ করলে তা অপরাধের মধ্যে পড়ে না। এদিন প্রধান বিচারপতি জানান, বিয়ে করা মানেই স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি বা স্বামী, স্ত্রীর প্রভু হয়ে যান না। প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, সংবিধানের মধ্যেই আমি, তুমি ও আমরা, সমস্ত ব্যক্তি ও ব্যক্তি সম্পর্ককে সমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই যে আইন মানুষের ব্যক্তিগত সম্মান, সিদ্ধান্তকে খাটো করে, মহিলাদের অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তা অসাংবিধানিক। এদিন তাঁর মন্তব্য ১৮৬০ সালের ওই আইন ‘অসুখী মানুষদের শাস্তি’ দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হত এতদিন।
এদিনের রায়ে শীর্ষ আদালতের তরফে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পরকীয়া সম্পর্কের ক্ষেত্রে এতদিন যে আইন ছিল তাতে মানুষকে মূলত বৈবাহিক সম্পর্কে বিশ্বস্ত থাকার নিদান চাপিয়ে দেওয়া হোত। যা ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তি গোপনীয়তার পরিপন্থী। কোর্ট এদিন আরও জানায়, পরকীয়া অসুখী বিবাহ জীবনের কারণ হতে পারে না। বরং তা অসুখী বিবাহের-দাম্পত্যের ফলাফল।
উল্লেখ্য, এতদিন যে আইন প্রচলিত ছিল, তাতে বলা হয়েছিল, কোনও বিবাহিতা মহিলার স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনও পুরুষ সেই মহিলার সাথে যৌন সংসর্গ করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাবাস, জরিমানা বা দুই’ই হতে পারে। কোর্ট এদিন বলে, স্বামীর অনুমতি থাকলে পর-পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ না, আর অনুমতি না থাকলে তা অপরাধ এই যুক্তি খাটে না। কোর্টের পর্যবেক্ষণ, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ যদি নিজেদের ইচ্ছায় চার দেওয়ালের মধ্যে যৌনতায় মিলিত হয়, তা হলে তাকে আর যাই হোক অপরাধ বলা যায় না এবং আইনের মাধ্যমে নৈতিকতা বিষয়টি চাপিয়েও দেওয়া যায় না। যখন এই আইন প্রায় দেড়শো বছর পূর্বে তৈরি হয়, তখনকার সমাজ আর এখনকার সময়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। তখন মহিলাদের অনেক ক্ষেত্রেই স্বামীর সম্পত্তি মনে করা হোত। তাই আজ এই আইন থাকা মানে পিছনে হাঁটার সামিল, তাই এই অসংবিধানিক, স্বৈরাচারী আইনের কোনও অস্তিত্ব থাকতে পারে না।
এই আইনকে বাতিল করার দাবি নিয়ে বেশ কিছু আবেদন জমা পড়েছিল শীর্ষ আদালতে। তবে কেন্দ্রের তরফে এই আইনের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলা হয়েছিল, বৈবাহিক সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষায় এই আইন থাকা উচিত। কোর্টের প্রশ্ন, স্বামীর অনুমতিতে কোনও মহিলা যদি অপর পুরুষের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হন তাহলে বৈবাহিক পবিত্রতা রক্ষা হয়, আর বিনা অনুমতিতে তা ধ্বংস হয় এই যুক্তি কীভাবে খাটে?

Comments are closed.