কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের জাতি এবং পারিবারিক পেশাকে কটাক্ষ করে বিজেপি মুখপত্রে কার্টুন, সমালোচনা করল সিপিএম

কেরলের সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে তাঁর জাতি এবং পারিবারিক পেশাকে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপির মুখপত্রে প্রকাশিত কার্টুনকে কেন্দ্র করে নয়া বিতর্ক। সাবরীমালা ইস্যু নিয়ে মহিলা বৈষম্যের পর কেরল বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন করে উঠল জাতি বৈষম্যমূলক ভেদাভেদ সৃষ্টির অভিযোগ।
কেরলের সাবরীমালা মন্দিরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরও মহিলাদের প্রবেশ করতে দিতে নারাজ মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপিও। এরই প্রতিবাদে এবং শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের দাবিতে সম্প্রতি এক মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়েছে কেরলের সিপিএম। উইমেনস ওয়াল নামে ওই কর্মসূচিতে সমাজের নানা স্তরের মহিলার অংশ নেওয়ার কথা। একে কেন্দ্র করেই সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ মোশন এনেছে বিজেপি। সব মিলে সাবরীমালা ইস্যুকে কেন্দ্র করে লোকসভার আগে কেরলের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রীতিমতো উত্তপ্ত হচ্ছে।
এর মধ্যেই কেরল বিজেপির মুখপত্র জন্মভূমি’তে গত ২২ ডিসেম্বর, শনিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কটাক্ষ করে একটি কার্টুন ছাপা হয়। মালায়ালাম এই পত্রিকাটিতে প্রকাশিত সেই কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি একটি সংবাদপত্র খুলে আলোচনা করছেন। সামনে হেঁটে যাচ্ছেন পিনারাই বিজয়ন। ছবির নীচে লেখা, ‘যাঁর নারকল গাছে চড়া উচিত তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসালে এই অবস্থাই হয়।’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, সাবরীমালা ইস্যুতে পিনারাই বিজয়নকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কেরল বিজেপির মুখপত্রে ওই কার্টুনটি আঁকা হয়।

এই কার্টুন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই কেরলে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জাতি বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ উঠছে। কারণ, পিনারাই বিজয়ন ওবিসি শ্রেণীর থিয়া সম্প্রদায়ের লোক। এই সম্প্রদায়ের লোকেরা কেরলে বহু বছর ধরে সাধারণত নারকল পাড়ার পেশার সঙ্গে যুক্ত। বিজয়নের বাবাও এই পেশার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন।
কেরল বিজেপির মুখপত্রে এই কার্টুন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। বিষয়টির তীব্র নিন্দা করেছে রাজ্য সিপিএম। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, বর্তমান আধুনিক যুগে যখন মানুষ ঘরোয়া কথাবার্তাতেও লিঙ্গ এবং জাতি বৈষম্যমূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করছে, তখন একটি দলের মুখপত্রে এই মন্তব্য যথেষ্ট অপমানজনক। এর থেকেই বোঝা যায় বিজেপির আসল রঙ। তিনি লিখেছেন, এর আগেও সংঘ পরিবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও জাতিভেদ প্রথাকে বারবার খুঁচিয়ে তুলতে চেয়েছে।
এই কার্টুনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কেরলের সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তাঁদের মতে, এতেই পরিষ্কার বিজেপির এখনও মূল অ্যাজেন্ডা সেই হিন্দুত্ব এবং তারা ভারতীয় সমাজে ফের জাতিভেদ প্রথাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। সমালোচকরা বলছেন, বিজেপি একদিকে হিন্দু সংহতির কথা বলছে, আবার সেই ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যেই জাতিভেদ, উচ্চ বর্ণ-নিম্ন বর্ণের ভেদাভেদের বিষ ছড়াতে চাইছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তাঁর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করে বলেছিলেন, একজন চাওয়ালাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করলে এমনই হয়। এমনকী মোদী এই পেশা নিয়ে কংগ্রেস নেতা মণিশংকর আইয়ারের তির্যক মন্তব্যে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। সেই সময় বিজেপির পক্ষ থেকে এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করা হয়।
প্রশ্ন উঠছে যে দল নিজেদের নেতা-প্রধানমন্ত্রীর অতীত নিয়ে কথা উঠলে রে রে করে ময়দানে নামে, সেই দলই কীভাবে নিজের মুখপত্রে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর জাতি বা পারিবারিক পেশা নিয়ে আক্রমণ করে?

Comments are closed.