এক মাসের মধ্যে মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে ১৯ শতাংশ, প্রথম দফার পর সি-ভোটার ও সিএসডিএসের সমীক্ষায় উদ্বেগে বিজেপি

দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে দুশ্চিন্তার খবর বিজেপির জন্য। প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি কি তার জাদু হারাচ্ছে? ১১ ই এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের পর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি সংস্থা সি-ভোটার এবং সিএসডিএসের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিজেপির আসন সংখ্যা কমছে।
নিউজ পোর্টাল the quint এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওপিনিয়ন পোলে ইঙ্গিত ছিল, নরেন্দ্র মোদীর এনডিএ খুব সহজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ফেলবে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের পর থেকে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়তে পারে বিজেপি, এমনই ইঙ্গিত the quint এর প্রতিবেদনে।
the quint এ ১৭ ই এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে একটি প্রতিবেদন। তাতে গত ১৩ ই এপ্রিল ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য এশিয়ান এজ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে সিএসডিএসের ডিরেক্টর সঞ্জয় কুমারের বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে তিনি বলছেন, প্রথম দফায় উত্তর প্রদেশের যে ৮ টি কেন্দ্রে ভোট হয়, তার মধ্যে একমাত্র গাজিয়াবাদ এবং গৌতম বুদ্ধ নগরেই ভোটদানের হার বেড়েছে। বাকি ৬ টি আসন, যেখানে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা বেশি, সেখানে ২০১৪ সালের তুলনায় ভোট কম পড়েছে। ডক্টর সঞ্জয় কুমারের মতে, প্রথম দফার পর উত্তর প্রদেশে কেবলমাত্র গাজিয়াবাদ ও গৌতম বুদ্ধ নগর আসনে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। বাকি আসনগুলিতে সমস্যায় পড়তে পারে মোদীর দল। আর যদি তা হয়, তবে শুধুমাত্র প্রথম দফার ভোটেই যোগীরাজ্যে বিজেপি ৬ টি আসন হারাতে পারে। ২০১৪ সালে বিজেপি এই ৮ টি আসনই জিতেছিল।
the quint এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্য এশিয়ান এজ-এর ৬ ই এপ্রিলের আরেকটি প্রতিবেদনের। যেখানে সঞ্জয় কুমারকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে সেই পর্যবেক্ষণ কীভাবে বদলে গেল তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন সিএসডিএসের ডিরেক্টর।
১১ ই এপ্রিল প্রথম দফার ভোটের ঠিক কয়েকদিন আগে, ৬ তারিখ, সিএসডিএসের সমীক্ষায় উঠে এসেছিল উত্তর প্রদেশের ৮০ টি আসনের মধ্যে ৩২ থেকে ৪০ টি আসন পেতে চলেছে বিজেপি। কিন্তু ১৩ ই এপ্রিলের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, প্রথম দফার ৮ টি আসনের মধ্যে ৬ টি আসনেই বিজেপি হারতে পারে। বাকি দফাগুলোতেও এই প্রবণতা বজায় থাকলে বিজেপি উত্তর প্রদেশে আটকে যেতে পারে ২০ থেকে ২৫ টি আসনে।
সঞ্জয় কুমার উত্তর প্রদেশের পাশাপাশি বিহার এবং মহারাষ্ট্রের কথাও বলছেন। উত্তর প্রদেশের মতোই বিহার এবং মহারাষ্ট্রেও প্রথম দফায় ভোটের হার ২০১৪ সালের তুলনায় কমেছে। যা বিজেপিকে চিন্তায় রাখবে বলে মনে করছেন সিএসডিএসের ডিরেক্টর। বিহারে ওপিনিয়ন পোলে যেখানে গেরুয়া ঝড়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু প্রথম দফায় যে চারটি আসনে ভোট হয়েছে, সেখানে মোদী তুফান নয় বরং স্থানীয় ইস্যুতেই ভোট হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এমনকী মহারাষ্ট্রের বিদর্ভের যে আসনগুলিতে প্রথম দফায় ভোট হয়েছে, তা বিজেপির পক্ষে মোটেও স্বস্তির বার্তা বয়ে আনছে না বলেও মনে করছেন তাঁরা। এ মাসের শুরুতেই করা ওপিনিয়ন পোলে অবশ্য বিহারের ৪০ টি আসনের মধ্যে ২৮-৩৪ টি আসন বিজেপি পেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল, একইভাবে মহারাষ্ট্রের ৪৮ টি আসনের মধ্যে ৩৮-৪২ টি আসন বিজেপি দখল করতে পারে বলে দেখানো হয়েছিল।
শুধু সিএসডিএস নয়, আরেকটি সমীক্ষা সংস্থা সি-ভোটারের সার্ভেতেও মোদীর আসন সংখ্যা ক্রমেই কমছে। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে সমীক্ষা চালায় সি-ভোটার। সেখানে দেখা যায়, নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা এক মাসের মধ্যে ১৯ শতাংশ কমেছে। সি-ভোটার এবং আইএএনএস ইলেকশন ট্র্যাকার অনুযায়ী, ২৬ শে ফেব্রুয়ারি বালাকোট স্ট্রাইকের পর সর্বোচ্চ মাত্রা ছুঁয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা। গত ৭ ই মার্চ ইলেকশন ট্র্যাকারে দেখা গিয়েছিল, মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা পৌঁছেছিল সর্বোচ্চ ৬২.০৬ শতাংশে। কিন্তু প্রথম দফা ভোটের ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ ১২ ই এপ্রিল করা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, তা কমে হয়েছে ৪৩.২৫ শতাংশ। ৫ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ পতন।

Comments are closed.