ঝাড়খন্ড থেকে এরাজ্যে লোক ঢুকিয়ে গণ্ডগোল পাকাতে চাইছে বিজেপি, প্ররোচনায় পা দেবেন না, আসানসোলে বললেন মুখ্যমন্ত্রী

প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ডের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নয়া জেলা আসানসোলের জামুরিয়ায় জনসভার মঞ্চ থেকে একথা জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসানসোল তথা এরাজ্যের লাগোয়া প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড। তাঁর অভিযোগ, ঝাড়খন্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এরাজ্যে লোক ঢুকিয়ে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, মাথায় গেরুয়া ফেট্টি বেঁধে দাপাদাপি করছে বিজেপির লোকজন।
এরপরই মমতা উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, কোনওরকম প্ররোচনায় পা দেবেন না, অশান্তি করতে দেবেন না। সরকার আপনাদের পাশে আছে, ঝাড়খন্ডেও লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও ঝাড়খন্ডের লোকসভা, বিধানসভা না স্থানীয় নির্বাচন কোথায় প্রার্থী দেওয়া হবে, তা এদিন তিনি জানাননি।
আসানসোল, জামুরিয়ায় প্রচুর হিন্দীভাষী এবং বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে আসা মানুষের বসবাস। একথা মাথায় রেখে মমতা এদিন বলেন, এরাজ্যে সবাইকে স্বাগত। হিন্দীভাষী, বিহারিদের ভয়ের কোনও কারণ নেই, সরকার সব সময় তাদের পাশে আছে। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। তাঁর কাছে দুর্গা পুজো, ইদ, ছট পুজো সব সমান বলেও এদিন বার্তা দেন মমতা। গুজরাত, মহারাষ্ট্রের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ওখান থেকে বিহারি, হিন্দীভাষীদের তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে, কিন্তু বাংলা বিভেদের রাজনীতি করে না। বিভেদ নয়, ঐক্যই বাংলার ঐতিহ্য।
মমতার অভিযোগ, বিজেপি দাঙ্গার রাজনীতি করে, তাই বাঙালি, বিহারি ভেদাভেদের চেষ্টা চলছে এরাজ্যে। কিন্তু তৃণমূল ভেদাভেদের রাজনীতি করে না, রাজ্য সরকার তা বরদাস্তও করবে না বলে এদিন কড়া বার্তা দেন মমতা।
নয়া জেলা আসানসোলে নতুন হাসপাতাল, আদালত, হিন্দী কলেজ, স্টেডিয়ামের কাজ হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। বলেছেন, দুর্গাপুরের ডিপিএলের পুনর্গঠন করা হবে। রানিগঞ্জকে ধসপ্রবণ এলাকা বলে উল্লেখ করে মমতা বলেছেন, ওখানে যাতে ধসে কারও ক্ষতি না হয় তাই স্থানীয়দের সরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তৈরি হচ্ছে ৪৫ হাজার বাড়ি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ওখানকার বাসিন্দাদের জন্য। মমতা এদিন বলেন, বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস মিলে ওখানকার বাসিন্দাদের ভুল বোঝাচ্ছে। জায়গা ছেড়ে সরকারি পুনর্বাসনে যেতে বাসিন্দাদের নিষেধ করছে। মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয়দের বলেছেন, আপনারা ওদের ভুল কথা শুনবেন না, ধস নামলে আপনাদের ক্ষতি হবে। তাই সরকারের সঙ্গে থাকুন। ওখান থেকে সরে নিরাপদ জায়গায় আসুন, সরকার আপনাদের পাশে আছে। রানিগঞ্জ, কুলটি, জামুড়িয়ায় জলের সমস্যা আছে, তার সমাধান করা হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। দুর্গাপুর, পানাগড়, রানিগঞ্জ, আসানসোলে অনেক শিল্প এসেছে ও আসছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এদিন দাবি করেছেন। স্থানীয় বণিকসভাগুলিকে সরকারের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, আসানসোলেই খুব দ্রুত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি তৈরি হবে। সেখানে বহু মানুষ কাজ পাবেন। কৃষকদের উদ্দেশ্যে মমতা এদিন বলেন, জমির খাজনা, মিউটেশন ফি আর নেওয়া হচ্ছে না। কৃষি আর শিল্প দুটোই হাত ধরে পাশাপাশি চলুক, এই বার্তা দেন তিনি।

Comments are closed.