লেনিন, স্ট্যালিনে আপত্তি, কেরলের মার্ক্সইস্ট কমিউনিস্ট পার্টি প্রচারের মুখ করছে গণতান্ত্রিক নেত্রী রোজা লুক্সেমবার্গকে

সাবরীমালা ইস্যুতে উত্তাল কেরলের রাজনীতি। বাংলা এবং ত্রিপুরায় নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর একমাত্র কেরলেই সিপিএমের নেতৃত্বে বামেরা ক্ষমতায়। এবং সেই সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। এই পরিস্থিতিতে সাবরীমালা ইস্যুই সেই রাজ্যে বিজেপির অন্যতম ভরসা। একদিকে ধর্মীয় ভাবাবেগ, অন্যদিকে শাসক বাম সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে খর্ব করার অভিযোগকে সামনে রেখে রাজ্যজুড়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি।
আর কেরলের এমনই এক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই রাজ্যের কমিউনিস্ট মার্ক্সইস্ট পার্টি (সিএমপি) লেনিন, স্ট্যলিনকে বাদ দিয়ে পোলিশ-জার্মান রোজা লুক্সেমবার্গকে মুখ হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেরলের কমিউনিস্ট মার্ক্সইস্ট পার্টি মনে করছে লেনিন, স্ট্যালিনের এই চিন্তাভাবনাতেও খামতি ছিল। কারণ তাঁরা শ্রমজীবী মানুষের হয়ে একদলীর শাসন ব্যবস্থার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তুলনায় কমিউনিস্ট নেত্রী রোজা লুক্সেমবার্গের চিন্তাভাবনা অনেক বেশি গণতান্ত্রিক ছিল বলে মনে করছে কেরলের এই বাম দলটি। তাদের যুক্তি, এই গণতন্ত্রপ্রেমী সমাজকর্মী তথা বিপ্লবী লুক্সেমবার্গ একদলীয় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিলেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন, সংসদীয় ব্যবস্থার পক্ষে বরাবর সওয়াল করে এসেছেন লুক্সেমবার্গ। বামপন্থী হয়েও বামপন্থার তথাকথিত কিছু ধারণার বিরোধিতা করে এসেছেন তিনি। কমিউনিস্ট পার্টি অফ জার্মানির পুরোধা এবং পরে ১৯১৯ সালে খুন হয়ে যাওয়া রোজা লুক্সেমবার্গের এই গণতান্ত্রিক উদার চিন্তাভাবনাকে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে কেরলের কমিউনিস্ট মার্ক্সইস্ট পার্টি। তাই লুক্সেমবার্গের শততম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁকে সম্মান জানাতে চাইছে দলটি। চাইছে স্ট্যালিনের বামপন্থার তত্ত্বকে ছেড়ে লুক্সেমবার্গকে আপন করে নিতে। আগামী বছরের ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি কোচিতে বসছে কেরলের কমিউনিস্ট মার্ক্সইস্ট পার্টির দশম পার্টি কংগ্রেস। দলের সিদ্ধান্ত, সেই উপলক্ষ্যে দলের পোস্টারে এবার ব্যবহার করা হবে লুক্সেমবার্গের ছবি।
সিএমপি’র সাধারণ সম্পাদক সি পি জন জানিয়েছেন, তাঁরা স্ট্যালিনিজম পরিত্যাগ করে আর এক বাম পুরোধা রোজা লুক্সেমবার্গ, যিনি মহিলা নেত্রীও ছিলেন, তাঁর চিন্তাভাবনাকে আপন করে নিতে চাইছেন। ২৫ বছরের পুরনো দলটি মনে করছে, লুক্সেমবার্গ অনেক বেশি গণতান্ত্রিক ছিলেন। সিএমপি মনে করছে, ভারতের বামপন্থী অনেক বেশি রাশিয়া ও চিনের বামপন্থী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত। কিন্তু সেই মতাদর্শগুলি গণতান্ত্রিক ছিল না। তুলনায় জার্মানির কমিউনিজম অনেক বেশি গণতান্ত্রিক।
দলের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, লুক্সেমবার্গ এমন এক বামপন্থী ছিলেন যিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজমের বিরোধিতা করতেন, মনে করতেন সেখানে গণতান্ত্রিকতার অভাব রয়েছে। তাই স্ট্যালিনের চিন্তা ধারার বিরোধিতায় তাঁরা লুক্সেমবার্গকেই তুলে ধরতে চাইছেন।

Comments are closed.