২০১৯ এ বাংলায় ফের সিপিএম-কংগ্রেস জোট? লোকসভা ভোটের কৌশল ঠিক করতে ২৯ অগাস্ট মিটিং ডাকল আলিমুদ্দিন

২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের মতোই আগামী লোকসভা ভোটেও কি ৩১ নম্বর আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা জোট করতে চায়? কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে কী অবস্থানই বা হওয়া উচিত রাজ্য সিপিএমের? মোদ্দা কথায়, লোকসভা ভোটে রাজ্য দলের কৌশলগত বা ট্যাকটিকাল লাইন কী হবে তা ঠিক করতে আগামী ২৯ অগাস্ট রাজ্য কমিটির মিটিং ডাকল সিপিএম। সেদিন সাড়ে চার ঘন্টার সেই রাজ্য কমিটির মিটিংয়ের অ্যাজেন্ডা, লোকসভা ভোটে দলের লড়াইয়ের কৌশলগত লাইন এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক।
রাজ্য কংগ্রেসের একটা বড় অংশ এখনও চাইছে, ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আগামী লোকসভা ভোটেও বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে। যদিও কংগ্রেসের কী চূড়ান্ত অবস্থান হবে তা পুরোটাই নির্ভর করছে দিল্লির ওপর। বরং সম্প্রতি তৃণমূল নেত্রী দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করার পর, রাজ্যে কংগ্রেসের ‘সিপিএমপন্থী’ নেতারা খানিকটা ধাক্কা খেয়েছেন। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হলে কংগ্রেস হাইকমান্ডের কোনও আপত্তি নেই, এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটপন্থী সিপিএম নেতারাও। কিন্তু এর পরেও কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার একটা রাস্তা খুলে রাখতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বিশেষ করে আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গেই আসন সমঝোতা করতে আগ্রহী। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১৬ সালের আসন সমঝোতা বা জোট নিয়ে রাজ্য পার্টির যতই সমালোচনা করুক না কেন, আগামী দিনেও জোটের রাস্তা খোলা রাখতে বদ্ধপরিকর বাংলার সিপিএম নেতৃত্ব। আর রাজ্য কমিটি থেকে তা অনুমোদন করিয়েই দিল্লিতে সেই প্রস্তাব পাঠাতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সূত্রের খবর, অক্টোবরের ৬ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছে সিপিএম। সেই বৈঠকে ২০১৯ লোকসভা ভোটের রাজনৈতিক এবং কৌশলগত লাইন নিয়ে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করার কথা। তার আগে এ কে গোপালন ভবনের পক্ষ থেকে সমস্ত রাজ্য পার্টির কাছে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইন কী হওয়া উচিত তা জানতে চাওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝির মধ্যে সমস্ত রাজ্যের রিপোর্ট দিল্লিতে পৌঁছানোর পর বসবে সিপিএমের পলিটব্যুরো মিটিং। সেখানে বিভিন্ন রাজ্যে দলের পরিস্থিতি পর্যলোচনা করে কৌশলগত লাইনের খসড়া চূড়ান্ত হবে, যা নিয়ে মূল আলোচনা হবে ৬ থেকে ৮ অক্টোবরের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে। পলিটব্যুরোতে কী রিপোর্ট পাঠানো হবে তা ঠিক করতেই আগামী ২৯ অগাস্ট বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য কমিটির মিটিং ডেকেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
সূত্রের খবর, এই মিটিংয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক এবং আসন সমঝোতা নিয়েই মূলত আলোচনা হওয়ার কথা। রাজ্য সিপিএমের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই একাধিকবার স্পষ্ট করা হয়েছে, বাংলায় তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই দলকেই প্রধান শত্রু চিহ্নিত করেই লড়াই চলবে। এক কথায়, তৃণমূল এবং বিজেপি, দু’দলের বিরুদ্ধেই সমদূরত্বের নীতি নিয়েছে আলিমুদ্দিন। এই অবস্থায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর প্রায় অধিকাংশ সদস্যই মনে করেন, বাংলায় এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে চতুর্মুখী লড়াই হলে আখেরে তৃণমূলেরই সুবিধে। বরং তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার দরজা খোলা রেখে বিকল্প রাস্তা বের করতে পারলে লোকসভা ভোটে বাড়তি সুবিধে মিলবে। অন্তত, রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর এবং দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদসহ কয়েকটি আসনে জোরদার লড়াই করা যাবে। অন্যথায়, লোকসভা ভোটের পুরো লড়াইটাই তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে কেন্দ্রীভূত হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে, রাজ্য থেকে এখন লোকসভায় সিপিএমের যে দুটি আসন রয়েছে, তা থাকার সম্ভাবনাও কমে যাবে। তাই সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী চায়, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে। যদিও আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতারা জানেন, এব্যাপারে সরাসরি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মতি পাওয়া যাবে না। তাই খানিকটা কৌশলেই তাঁরা চাইছেন, রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে একটা চূড়ান্ত ঐক্যমত্য। যেখান থেকে আওয়াজ উঠবে, ‘এখন রাজ্যের যা পরিস্থিতি এবং মেরুকরণের রাজনীতি তাতে একা সিপিএম বা বামেদের পক্ষে তৃণমূল-বিজেপির সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। তারপর রাজ্য কমিটির সেই প্রস্তাব বা পরোক্ষে আসন সমঝোতার দাবি পৌঁছে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে মার্চ মাসে গোড়ায় যে রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, সেখানে যথেষ্টই বাধার মুখে পড়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, বর্ধমানের জেলার পাশাপাশি, অন্য কিছু জেলারও একাধিক সদস্য জোটের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তারপর রাজ্য সিপিএমের দলীয় বিন্যাসে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের রাজ্য সম্মেলনে জোটপন্থী একাধিক নেতা রাজ্য কমিটিতে এসেছেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও জোটপন্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। শুধু তাই নয়, এবার রাজ্য থেকে জোটপন্থী নেতাদেরই আলিমুদ্দিন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়েছে। সব মিলে, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার রাস্তা খোলা রেখেই রাজনৈতিক প্রস্তাব পলিটব্যুরোতে পাঠানো যাবে বলেই ২৯ অগাস্টের রাজ্য কমিটির মিটিংয়ের আগে আশাবাদী আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

Comments are closed.