দুর্গাপুরের সিপিএমের গোষ্ঠী কোন্দলের খবর কীভাবে thebengalstory.com এ? তদন্ত কমিশন গড়ল সিপিএম

দুর্গাপুরে সিপিএমের অভ্যন্তরীন গোলমালের খবর কীভাবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা জানতে তদন্ত কমিশন গঠন করল দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর উপস্থিতিতে গত ৩০ এবং ৩১ জুলাই দুদিন ধরে চলা পশ্চিম বর্ধমান সিপিএমের জেলা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিপিএম নেতাদের গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, এখনও তার সুরাহা না হলেও, কীভাবে তা বাইরে বেরিয়েছে তা জানতে সিপিএমের এই তদন্ত কমিশন গঠন রীতিমতো নজিরবিহীন। দুই সদস্যের এই তদন্ত কমিশনের একজন রানীগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্ত। এই কমিশন খতিয়ে দেখবে, পার্টির অভ্যন্তরীন খবর কে বা কারা সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘ফাঁস’ করেন। চিহ্নিত করা গেলে তাঁদের শাস্তি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কিন্তু সিপিএম পার্টির কী এমন অভ্যন্তরীন খবর প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে, যার জন্য জেলা পার্টিকে একেবারে তদন্ত কমিশন গঠন করতে হল?
জুন মাসের মাঝামাঝি ছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলায় সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলী গঠন। সেখানে ১০ জনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হয়। তার মধ্যে কাঁকসা এলাকা থেকে ছিলেন দুই জেলা কমিটি সদস্য, বীরেশ মন্ডল এবং অলোক ভট্টাচার্য। বাকি ৮ জনই আসানসোল এলাকার। কিন্তু দুর্গাপুর এলাকা থেকে একজন জেলা কমিটির সদস্যকেও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা দেওয়া হয়নি। আর এখানেই ক্ষোভের সূত্রপাত। দুর্গাপুর পূর্বর সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়, শান্তি চ্যাটার্জি, মহাব্রত কুন্ডু, পঙ্কজ রায় সরকার, লাল্টু দে’র মতো জেলা কমিটির একাধিক নবীন এবং প্রবীন সদস্য রয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরেই নানা আন্দোলন-সংগ্রামে রয়েছেন। কিন্তু দুর্গাপুর এলাকার একজনকেও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে না নেওয়ায় তাঁরা প্রত্যেকেই সিপিএমের অন্দরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করেই তাঁরা থামেননি। পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব এবং ৩১ নম্বর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে পক্ষপাত এবং স্বজনপোষনের অভিযোগ জানিয়ে দুর্গাপুর এলাকার একাধিক সিপিএম নেতা সরাসরি চিঠি পাঠান দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। স্বপন দেবরায় এই ঘটনার প্রতিবাদে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে চান বলে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কাছে।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর এলাকার বহু নেতা এবং খোদ বিধায়ক সরাসরি জেলা নেতৃত্ব এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিঠি পাঠানোয় অস্বস্তিতে পড়ে যান সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা। সমস্যার সমাধানে দুর্গাপুরের বহু নেতাকে বারবার আলোচনার জন্য আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে ডেকেও পাঠান রাজ্য সম্পাদক নিজে। কিন্তু এক মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও সমস্যা এখনও পুরোপুরি মেটেনি। বরং দুর্গাপুর এবং আসানসোলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং কলহ যেখানে পৌঁছেছে, তাতে সম্মানজনক রফাসূত্র কীভাবে বেরোবে তা নিয়েও খানিক চিন্তায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
জুন মাসের মাঝামাঝি পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির মিটিংয়ের পরই ‘বর্তমান’ পত্রিকায় সিপিএমের এই গোলমাল নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে জেলা কমিটির মিটিংয়ে গণ্ডগোলের কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল, ‘সূর্যকান্ত মিশ্রর সামনেই কিছু সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন’। ২৩ শে জুন thebengalstory.com এ ‘পশ্চিম বর্ধমানে সিপিএমে গোষ্ঠী কোন্দল চরমে। দুর্গাপুরের সিপিএম বিধায়কের ইস্তফা পত্র, অভিযোগ কেন্দ্রীয় কমিটিকে’ শীর্ষক খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়, বিধায়কসহ অন্য নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিঠি দেওয়ার কথা। বিধায়কের ইস্তফা পত্রের কথা। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতারা। কীভাবে এই খবর প্রকাশিত হল তা নিয়ে চর্চা শুরু হয় দলের অন্দরে। গত ৩০ এবং ৩১ জুলাই ছিল পশ্চিম বর্ধমান সিপিএমের জেলা কমিটির মিটিং। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নিজে। এই জেলা কমিটির মিটিংয়ে মোট তিনটে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। একটি ইস্পাত এলাকার পুরনো এক সমস্যা নিয়ে। একটি দুর্গাপুরের কয়েক জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এবং অন্যটি, দুর্গাপুরের সিপিএম নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন বলে thebengalstory.com এ যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে। সূত্রের খবর, তিনটি কমিশনই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে। দুর্নীতি কিংবা অন্যান্য অভিযোগ নিয়ে সিপিএমের তদন্ত কমিশন নতুন কিছু নয়। কিন্তু মিডিয়ায় কীভাবে খবর বেরিয়েছে তা নিয়ে কমিশন হওয়ায় ওই জেলার নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত চর্চা শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক অতীতে নির্বাচনী রাজনীতিতে লাগাতার বিপর্যয় চলছে বাংলায় টানা ৩৪ বছর সরকার চালানো সিপিএমের। রাজ্যে বিরোধী দলের জায়গাটা প্রায় দখল করেই নিয়েছে বিজেপি। এই অবস্থায় কোথায় সর্বশক্তি দিয়ে হারানো জমি উদ্ধারে লড়বে, তা না, অভ্যন্তরীণ গোলমালেই জর্জরিত সিপিএম। জেরবার অবস্থা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। কিন্তু সেই সমস্যা পুরোপুরি সমাধানের আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের উৎস সন্ধানে মুজফফর আহমেদ ভবন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.