সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করে ভর্ৎসনার মুখে নৃপেন চৌধুরী, দীপক দাশগুপ্ত

এ যেন রাজ্য সিপিএমের মধ্যে এক মৌলিক বিরোধ। একদিকে সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষে সওয়াল, আর অন্যদিকে দলের কৃষক এবং শ্রমিক ফ্রন্ট্রের প্রতিনিধিদের তার বিপরীত অবস্থান।
যার জেরে, আসন্ন লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার বিরোধিতা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন দলের কৃষক এবং শ্রমিক ফ্রন্টের দুই নেতা। জেলায় জেলায় দলের নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, সিপিএমের দুই গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টের নেতৃত্বের অসম্মান কি আদৌ কাঙ্খিত?
গত বুধবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা হয়। ইতিমধ্যেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, রাজ্যে অন্তত ১৪-১৫ টি লোকসভা আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে। এব্যাপারে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা অনেকটা এগিয়েও ফেলেছেন।


পড়ুনঃ বাংলায় ১৪-১৫ টি লোকসভা আসনে সমঝোতার পথে সিপিএম-কংগ্রেস, প্রাথমিক ছাড়পত্র ইয়েচুরি-রাহুলের


সূত্রের খবর, গত বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেখানে আসন্ন লোকসভা ভোটে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পক্ষে সওয়াল করেন সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে প্রায় অধিকাংশই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে। রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে অধিকাংশ সদস্যই চুপ থাকলেও, কংগ্রেসের প্রসঙ্গে আপত্তি তোলেন কৃষক ফ্রন্টের নেতা মুর্শিদাবাদের নৃপেন চৌধুরী এবং শ্রমিক ফ্রন্ট সিটুর নেতা হাওড়ার দীপক দাশগুপ্ত। এর আগে ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে যখন দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল, তখনও এই দুই নেতা তার বিরোধিতা করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনেও এই বিষয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু সিপিএমের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাই জোটের পক্ষে ছিলেন।
সূত্রের খবর, গত বুধবার রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে নৃপেন চৌধুরী এবং দীপক দাশগুপ্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করা মাত্রই রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে হয়ে ওঠেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিমান বসু। দু’জনেই যথেষ্ট কড়াভাবে থামিয়ে দেন নৃপেন চৌধুরী এবং দীপক দাশগুপ্তকে। বলেন, ‘আপনারা এই সব কেন বলছেন? এসব কথার কোনও মানে হয় না। এখন রাজ্যের যা পরিস্থিতি তাতে বারবার এই ইস্যুর বিরোধিতা করে আপনারা ঠিক করছেন না।’ সূত্রের খবর, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিতর্ক না করতে দিয়ে যেভাবে তাঁদের কার্যত মিটিংয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে ‘অসম্মানিত’ বোধ করেছেন নৃপেন চৌধুরী এবং দীপক দাশগুপ্ত।
এরপর জোট নিয়ে কোনও বিতর্ক আর হয়নি। বিতর্ক বা বিরুদ্ধ মত এড়িয়েই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কার্যত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে। গোটা বিষয়টি আপাতত আগামী মার্চের গোড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সম্মতির অপেক্ষায়। তার আগে জোটের পক্ষে দলীয় সর্বসম্মতির জন্য আগামী ২৮ শে ফেব্রুয়ারি রাজ্য কমিটির বৈঠক ডেকেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেখানেই রাজ্যের পক্ষ থেকে প্রথামাফিক ছাড়পত্রে দেওয়া হবে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিষয়টিকে। তারপর রাজ্য কমিটির ‘সম্মতিসূচক’ প্রস্তাব পেশ করা হবে ৩ এবং ৪ মার্চের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে।
সিপিএমের একটা অংশের বক্তব্য, ২০০৪-০৫-০৬ সময়েই শিল্পায়ন কর্মসূচিকে একতরফাভাবে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং কয়েকজন নেতার কাছে বারবারই ‘অপমানিত’ হতে হয়েছে কৃষক এবং শ্রমিক ফ্রন্টের নেতাদের। তাঁদের বক্তব্যকে কোনও আমলই দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে তার কী ফল হয়েছে তা সকলেই দেখেছেন! এবারও কি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে ফের একঘরে করে দেওয়া হচ্ছে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই ফ্রন্ট কৃষকসভা এবং সিটুর নেতাদের? এই প্রশ্নই জোরালোভাবে উঠছে সিপিএমের অন্দরে।

Comments are closed.