দার্জিলিং, পুরুলিয়া, তমলুক সহ ৭-৮ টি কেন্দ্রে আসন সমঝোতায় জটিলতা, পূর্ব ঘোষণা থাকলেও বুধবার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না সিপিএম

অন্তত ২০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেও কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতায় কোনওরকম জটিলতা এড়াতে এবং ভোটারের মধ্যে যাতে ভুল বার্তা না যায় তার স্বার্থে বুধবারও প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করল না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সূত্রের খবর, রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ নিয়ে জট কাটার পর এই মুহূর্তে অন্তত ৭-৮ টি আসন নিয়ে সিপিএম এবং বামেদের মধ্যে শেষ মুহূর্তের দড়ি টানাটানি চলছে রাজ্য কংগ্রেসের। এই আসনগুলিতে রফাসূত্র বের না করে আগ বাড়িয়ে নিজেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিলে কংগ্রেসের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে মনে করছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও দু’একদিন অপেক্ষা করা হবে। তারপরই ঘোষণা করা হবে প্রার্থীদের নাম।
গত রবিবার বিকেলে নির্বাচন ঘোষণার পর বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানিয়েছিলেন, ১৩ তারিখ বিকেলেই সিপিএম সহ বাম প্রার্থীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার জন্য বুধবার দুপুরে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বামফ্রন্টের বৈঠকও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু এদিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারল না বামেরা। যদিও আগেই সিপিএম রায়গঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদে গতবার জেতা দুই সাংসদ মহম্মদ সেলিম এবং বদরুদ্দোজা খানের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বুধবার সকালে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসেছিল সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক। এদিন প্রার্থী তালিকা ঘোষণা এবং নির্বাচনী কৌশল চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, সিপিএমের পক্ষে যাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তাঁরা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে রিপোর্ট করেন, অন্তত ৭-৮ টি লোকসভা আসনে এখনও রফাসূত্র মেলেনি। এই আসনগুলি নিয়ে আলোচনা হয় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে। এই আসনগুলি হল দার্জিলিং, পুরুলিয়া, কলকাতা উত্তর, বারাকপুর, তমলুক, হাওড়া, আলিপুরদুয়ার, আসানসোল। এর মধ্যে পুরুলিয়া এবং আলিপুরদুয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপির সিট। এই সিট দুটি নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব কংগ্রেসকে স্বাভাবিকভাবেই কোনও পাকা কথা দিতে পারছেন না। সিপিএম নেতারা ঠিক করেছেন, এই আসন দুটি নিয়ে বিমান বসু শরিকদের সঙ্গে কথা বলবেন, দরকারে কংগ্রেসের সঙ্গে আবার কথা বলা হবে। কলকাতা উত্তর, বারাকপুর আসন সিপিএম ছেড়ে দিতে রাজি। কিন্তু আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চায় কলকাতা উত্তরে প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে না থাকা কাউকে প্রার্থী করুক কংগ্রেস। একইভাবে সিপিএম চাইছে, দার্জিলিং কেন্দ্রেও প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি না করা পাহাড়ের কাউকে প্রার্থী করতে, কিন্তু কংগ্রেস এই আসনটি দাবি করছে। সবচেয়ে সমস্যা হয়েছে পুরুলিয়া আসন নিয়ে। এই আসনের দাবি থেকে সরছে না কংগ্রেস, অন্যদিকে ফরওয়ার্ড ব্লকও এই আসন ছাড়বে না বলে জানিয়েছে। আসানসোল এবং তমলুক আসন সিপিএম কোনওভাবেই ছাড়তে চাইছে না। কংগ্রেসও তমলুক আসন নিয়ে গোঁ ধরে বসে আছে। সব মিলে এই ৭-৮ টি আসনে এখনও সমাধানসূত্র মেলেনি।
সিপিএমের একটা অংশ চাইছে, এই আসনগুলি বাদ দিয়ে বাকি কেন্দ্রে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হোক। কিন্তু একতরফাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করলে আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে এদিন সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে মত দিয়েছেন অধিকাংশ নেতা। দু’দলের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে, এমনটাও মানুষ মনে করতে পারেন বলে মিটিংয়ে জানিয়েছেন কেউ কেউ। সেই কারণে ঠিক হয়েছে, কংগ্রেসের জন্য আরও দু’একদিন অপেক্ষা করা হবে। যদিও এদিন কিছু নাম ঘোষণা করা গেলে প্রচার শুরু করা যেত, কিন্তু মানুষের মনে মসৃন আসন সমঝোতার বার্তা দিতে আর একটু অপেক্ষা করাই ঠিক হবে বলে মনে করছে সিপিএম।
এমনিতে সিপিএম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। যাদবপুরে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, দক্ষিণ কলকাতায় নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, বর্ধমান দূর্গাপুরে আভাস রায় চৌধুরী, বর্ধমান পূর্বে ঈশ্বর দাস, বীরভূমে ডাঃ রেজাউল করিম, বোলপুরে রামচন্দ্র ডোম, ঝাড়গ্রামে দেবলীনা হেমব্রম, বনগাঁয় অলোকেশ দাসের নাম চূড়ান্ত। দমদম কেন্দ্র নিয়ে এখনও ভাবছে সিপিএম। বাঁকুড়ায় পার্থ মজুমদারের প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাঁকুড়া কেন্দ্রে তৃণমূল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করায়, এই কেন্দ্রে সিপিএম আরও একটু হেভিওয়েট কাউকে প্রার্থী করতে চাইছে। এই বিষয়টি নিয়েও বুধবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আলোচনা হয়।

Comments are closed.