‘বিজেপি চাইছে কংগ্রেস মুক্ত ভারত আর তৃণমূল করছে কংগ্রেস মুক্ত বাংলা’, এই স্লোগান তুলে ব্রিগেডে কংগ্রেসকে জোটবার্তা দেবে সিপিএম

‘বিজেপি বলছে কংগ্রেস মুক্ত ভারত, আর একের পর এক বিধায়ক, সাংসদকে নিজেদের দলে নিয়ে তৃণমূল করছে কগ্রেস মুক্ত বাংলা’, এই স্লোগানকে সামনে রেখেই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে ফের এরাজ্যে কংগ্রেসকে জোট বার্তা দিতে চলেছে সিপিএম।
গত চার বছর ধরেই এরাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করছে সিপিএম। গত ২০১৫ সালের ব্রিগেড সমাবেশ থেকেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্লোগান তুলেছিলেন, ‘তৃণমূল হঠাও বাংলা বাঁচাও, বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও’। তখন সামনে ছিল এরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তাই বিজেপির আগে রাখা হয়েছিল তৃণমূলের নাম। এবার সামনে লোকসভা ভোট। তাই ক্রমপর্যায়ের সামান্য বদল ঘটিয়ে বামেদের ব্রিগেড সমাবেশের জন্য সিপিএম স্লোগান দিয়েছে, ‘বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও, তৃণমূল হঠাও রাজ্য বাঁচাও’।
সূত্রের খবর, এই স্লোগানেই আটকে না থেকে আরও একধাপ এগিয়ে ব্রিগেড সমাবেশ থেকে লোকসভা ভোটের জন্য বাংলা তো বটেই, কেরল বাদে গোটা দেশে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বার্তাই দেবে সিপিএম। এবং আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করছে, সম্প্রতি মালদহ উত্তরের কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায়, কংগ্রেসের প্রতি তাদের অবস্থান আরও স্পষ্ট হল। শুধু তাই নয়, এরাজ্যে সিপিএম সম্পর্কেও কংগ্রেসের মনোভাব খানিকটা পাল্টাবে।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য সিপিএম ইতিমধ্যেই তাদের কৌশলগত অবস্থান ঘোষণা করেছে। সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে হারাও, ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গঠন করো এবং বামেদের শক্তিবৃদ্ধি করো, মূলত তিন স্লোগানকে সামনে রেখে লোকসভার প্রচারে নামবে সিপিএম। ২০০৪ লোকসভা ভোটের আগেও এই স্লোগানই দিয়েছিল এ কে গোপালন ভবন। যদিও সম্প্রতি সাবরীমালা ইস্যুতে কেরলে কংগ্রেস সরাসরি পিনারাই বিজয়ন নেতৃত্বাধীন সিপিএম সরকারের বিরোধিতায় নেমেছে, কিন্তু তার কোনও প্রভাব এরাজ্যে পড়বে না বলেই মনে করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সম্প্রতি প্রয়াত নিরুপম সেনের স্মরণসভাতেও নাম না করে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র কংগ্রেসকে স্পষ্ট জোট বার্তা দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি-তৃণমূল দু’দলকেই হারানোর ডাক দিয়ে দু’জনেই ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে মিলে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন।
কিন্তু তারপরই ১৯ শে জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ব্রিগেডে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অভিষেক মনু সিংভি। এর ফলে সিপিএম নেতৃত্ব এবং বাংলার কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মধ্যেও জল্পনা তৈরি হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কী হবে তা নিয়ে। এরই মধ্যে সম্প্রতি মৌসম বেনজির নূর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু তারপর সিপিএম নেতৃত্ব বলছেন, বিজেপি যেভাবে কংগ্রেস মুক্ত ভারত করার কথা বলছে, একইভাবে কংগ্রেসের নেতাদের দলে নিয়ে গত কয়েক বছরে তৃণমূলও বাংলাকে কংগ্রেস মুক্ত করতে চাইছে। আর তা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতেও পারছেন। সেই কারণেই মৌসমের তৃণমূলে যাওয়া রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্কে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। আর সেই ডাকই দেওয়া হবে ব্রিগেড সমাবেশ থেকে।

Comments are closed.