শিখ হত্যায় কংগ্রেস নেতা সাজ্জন কুমারের সাজা ঘোষণায় আদালতে উঠে এল মুম্বই, গুজরাত, মুজফফরপুর দাঙ্গার প্রসঙ্গ

১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দাঙ্গায় ৫ শিখকে খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ সাজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। আর এই সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে আদালতে উঠে এল দেশের একাধিক দাঙ্গার প্রসঙ্গ। বিচারক বললেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। আদালতে এই কেসগুলির বিচার একটা ‘চ্যালেঞ্জ’। কারণ বেশিরভাগ ঘটনাতেই জড়িতরা কোনও না কোনও প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, নৃশংস দাঙ্গায় শুধু এক সম্প্রদায়ের মানুষকে নয়, হত্যা করা হয় মানবতাকে। তাই এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের দ্রুত বিচার জরুরি।
১৯৮৪ র শিখ দাঙ্গার এই মামলার সাজা ঘোষণা করতে গিয়ে আদালত বেশ কয়েকটি জাতি দাঙ্গার উল্লেখ করে বলে, এই দাঙ্গাগুলিতে টার্গেট ছিল যে কোনও একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ভারতে ১৯৮৪ সালের নভেম্বরে শিখ দাঙ্গায় শুধু দিল্লিতে হত্যা করা হয় ২ হাজার ৭৩৩ জন শিখকে। সারা ভারতে সরকারি হিসেবে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। তবে এই প্রথম বা শেষ নয়। শিখ হত্যার মতোই পঞ্জাব, দিল্লিসহ বিভিন্ন জায়গায় স্বাধীন ভারতে গণহত্যা ঘটেছে।
এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে মুম্বই, ২০০২ সালে গুজরাত, ২০০৮ সালে কন্ধমাল এবং ওড়িশা, ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরের দাঙ্গার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে এনে আদালত জানায়, এই ঘটনাগুলিতে চোখ রাখলেই দেখা যায়, কোনও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদতে তা ঘটেছে। আর এই দাঙ্গায় মূল অপরাধীরাও কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গা ঢাকা দিয়েছে। তাই এই ধরনের অপরাধীদের সাজা দেওয়া একটা বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে আদালতের স্বীকারোক্তি।
আদালতের অভিমত, ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার মূল ষড়যন্ত্রকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়িয়েছে। যেখানে ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গায় মূল অপরাধীদের শনাক্ত করতে বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) হাতে ভার দেওয়া হয়েছে, তখন ১৯৮৪ সালের দাঙ্গার মতো পুরনো একটি ঘটনায় ২০১৭ সালের আগে পর্যন্ত কোনও তদন্তকারী দলকেই নিযুক্ত করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর শিখ নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে খুন হন। তারপর দেশজুড়ে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর একটার পর একটা হিংসার ঘটনা ঘটে। দিল্লিতে ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় এই দাঙ্গা।
এই দাঙ্গায় অপরাধীদের শনাক্ত করতে ২১০১৭ সালে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে ও বিভিন্ন সাক্ষ্যগ্রহণের পর ৮৪ র জাতি দাঙ্গায় একজনকে ফাঁসির নির্দেশ দেয় দিল্লি আদালত। সোমবার কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ সাজ্জন কুমারকে শিখ- হত্যায় জড়িত থাকার অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।

Comments are closed.