পাকিস্তানের এমএফএন তকমা প্রত্যাহার, ভারতের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব ইসলামাবাদের

পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনায়, পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোণঠাসা করতে কেড়ে নেওয়া হয়েছে ভারতের দেওয়া মোস্ট ফেভার্ড নেশনের তকমা। এর ফলে বাণিজ্যিকভাবে ভারতের কাছ থেকে সমস্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে পাকিস্তান।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবারই একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন পাক প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যিক উপদেষ্টা রজক দাউদ। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রজক দাউদ জানিয়েছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনেরও দ্বারস্থ হতে পারে পাকিস্তান। অথবা ভারতের বিরুদ্ধে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা চিন্তা করছে পাকিস্তান।
‘ডন’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রকের এক অধিকর্তা জানিয়েছেন, ভারত থেকে যেসব দ্রব্য আমদানি করা হত, সেগুলিকে ‘নেগেটিভ লিস্ট’এ রাখছেন তাঁরা।
‘ডন’-এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, আগে ভারত থেকে ১,৯৬৩টি পণ্য আমদানি করত পাকিস্তান। তবে ২০১২ সালে তাকে কমিয়ে ১,২০৯-এ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পাক অধিকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের এমএফএন স্টেটাস বাতিল করার পর, আরও কিছু পণ্যকে ‘নেগেটিভ আইটেমের’ মধ্যে রাখা হচ্ছে। এছাড়া, ওয়াগা সীমান্ত দিয়ে ভারত-পাকিস্থানের বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও পাকিস্তান কিছু বিধি নিষেধ তৈরি করবে বলে জানা যাচ্ছে।
‘ডন’-এর ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, পাক বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আগের চেয়ে ভারত থেকে অনেক কম পণ্য আমদানি করত তারা। তাই ‘মোস্ট ফেভার্ড নেশন’ এর তকমা বাতিলের পর বাণিজ্যক্ষেত্রে বিশেষ অসুবিধে হবে না পাকিস্তানের।
অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে শুক্রবারই ভারতের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি হাই কমিশনার গৌরব আলুওয়ালিয়াকে ডেকে পাঠায় পাক বিদেশ মন্ত্রক। কোনও প্রমাণ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। ‘ডন’ -এর অন্য একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, ভারত ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে, এই মর্মে ভারতীয় হাই কমিশনারের হাতে একটি চিঠি তুলে দিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক।
এদিকে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, পাকিস্তান হিংসার নীতিতে বিশ্বাস করে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার কোনও প্রমাণ থাকলে তা তাঁদের হাতে দিক ভারত। পাকিস্তান নিরপেক্ষভাবে বিচার করে দেখবে এই ঘটনার নেপথ্যে কে রয়েছে। পাক বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখন দুটো বিকল্প খোলা রয়েছে। প্রথমটি হল, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ঘটনাকে তুলে ধরে দেশের মানুষের কাছে উত্তেজক বক্তৃতা দিতে পারেন মোদী। অথবা প্রকৃত দেশনেতার মতো নিজের দেশ ও সমগ্র এলাকার দারিদ্র দূরীকরণ ও উন্নয়নের কাজে মন দিতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। কোনটা করবেন তা অবশ্য মোদীকেই বেছে নিতে হবে বলে মন্তব্য পাক বিদেশমন্ত্রীর।

Comments are closed.