ইসলামপুর কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২, পুলিশের কেউ দোষী হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর

বৃহস্পতিবার উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে দাড়িভিট হাই স্কুলে ছাত্র বিক্ষোভ ও সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালনার যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত হবে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন বিদেশ সফররত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনা নিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ডিআই’কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঘটনায় আরএসএস রাজনৈতিক রং লাগিয়ে হিংসা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মহরমে সকলকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবারের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২। শুক্রবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে তাপস বর্মন নামে একাদশ শ্রেণীর এক পড়ুয়ারও মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, তাপস দাড়িভিট স্কুলেরই পড়ুয়া ছিল, স্কুলে শিক্ষকের দাবিতে বৃহস্পতিবার সেও ওই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হাজির ছিল। এই নিয়ে ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২। গতকাল ওই ঘটনায় রাজেশ সরকার নামে আইটিআই পড়ুয়া ও স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। অভিযোগ পুলিশের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে রাজেশের।
উল্লেখ্য, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের দাবি তুলে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও পথ অবরোধে শামিল হয়ে দাড়িভিট হাই স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ারা। তাদের মূল দাবি ছিল, স্কুলে উর্দু ভাষার কোনও বিষয় না থাকলেও, গত মঙ্গলবার সেখানে উর্দু ভাষার একজন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই শিক্ষককে সরিয়ে অন্যান্য যে বিষয়ে শিক্ষকের সংখ্যা কম সেখানে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানায় পড়ুয়ারা। এরপরই ওই অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা স্কুল চত্ত্বর। অভিযোগ, আন্দোলনরত ক্ষুদে পড়ুয়াদের সরাতে তাদের উপর চড়াও হয় পুলিশ। প্রতিবাদে পালটা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, ইটের ঘায়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। অভিযোগ, এরপরই ছাত্র আন্দোলনকে দমন করতে অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে পুলিশ। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে লাঠি চার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাস ও গুলিও চালানো হয় পুলিশের তরফে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই রাজেশ সরকার প্রাণ হারায় বলে জানা গেছে। ঘটনায় আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। পায়ে গুলি লেগে আরও একজন ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই রাজ্যজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক সরকারকে কেন গুলি ছুড়তে হল, প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয় ঘটনার পেছনে আরএসএস যুক্ত। তাদের প্ররোচণাতেই প্রথমে গুলি, বোমা নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায় দুস্কৃতীরা। বিরোধীদের পালটা বক্তব্য, দুষ্কৃতীরা এলাকায় বোমা, গুলি নিয়ে হাজির হল, আর পুলিশ গোয়েন্দারা তার আগাম খবর পেল না! রাতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ওই স্কুলে উর্দু শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডিআই। শিক্ষা দফতর এবিষয়ে কিছু জানত না। ওই ডিআই রবীন্দ্র কুমার মণ্ডলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পার্থবাবু।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। তাঁদের দাবি, মৃত আইটিআই পড়ুয়া রাজেশ সরকার তাদের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি’র সমর্থক ছিলেন।

Comments are closed.