ভোট ভাগাভাগি করে বিজেপির সুবিধা করে দেবেন না, শিলিগুড়িবাসীর কাছে আবেদন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

কী দিইনি শিলিগুড়িকে? বাঘাযতীন পার্কের জনসভা থেকে শিলিগুড়িবাসীকে প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রেলমন্ত্রী থাকার সময় বিভিন্ন রেল প্রকল্প ও একগুচ্ছ নতুন ট্রেন দেওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি উত্তরবঙ্গের উত্তরতম প্রান্তের এই মিশ্র সংস্কৃতির জনপদের জন্য কী কী করেছেন তার খতিয়ান পেশ করলেন তৃণমূল নেত্রী। বললেন, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে? তাঁর দাবি, পাহাড়ের ৩ বিধানসভায় ঢেলে ভোট পাবে তৃণমূল। মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, চোপড়ার মানুষও তৃণমূলকেই ভোট দেবেন। কিন্তু শিলিগুড়ি?

পরিবর্তনের হাওয়ায় ভেসে ২০১১ সালে বিধানসভায় বাম আমলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যকে হারিয়ে জিতেছিলেন তৃণমূলের চিকিৎসক প্রার্থী রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। কিন্তু সেই শেষ। তারপর থেকে শিলিগুড়ি খালি হাতেই ফিরিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। ২০১৪-এর লোকসভায় শিলিগুড়ি বিধানসভায় লিড নিয়েছিল বিজেপি, তারপর ২০১৫-এর পুরসভা দখল করে বামেরা, ২০১৬-এর বিধানসভাতে ফের বামেদের অশোক ভট্টাচার্যের কাছে হার স্বীকার করেন তৃণমূল প্রার্থী। এই প্রেক্ষিতে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ লোকসভা ভোটে এবার শিলিগুড়ির সমর্থন চাইলেন তৃণমূল নেত্রী। সভা শেষে জানিয়ে গেলেন তাঁর একান্ত ইচ্ছের কথা, দার্জিলিং জিতেছি, এটা দেখতে চাই। জানিয়ে দিলেন, দার্জিলিং থেকেই শুরু হবে বাংলার দিল্লি জয়ের অভিযান।

রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, কোচবিহারের মতোই এদিনও বাম-কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানুষদের কাছে মমতার আবেদন, ওদের দিয়ে ভোটটা নষ্ট করবেন না। শিলিগুড়িবাসীকে মমতা বলেন, ভোট ভাগাভাগি করে বিজেপির সুবিধা করে দেবেন না। বাংলায় একমাত্র তৃণমূলই লড়বে বিজেপির বিরুদ্ধে। তাই একজোট হয়ে তৃণমূলকেই ভোট দিন, বাঘাযতীন পার্ক থেকে আহ্বান মুখ্যমন্ত্রীর। বললেন, আমার বিশ্বাস এবার আপনারা আমাকেই ভোট দেবেন।

এদিন বাম-কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপির দিকেও তীব্র আক্রমণ ছুড়ে দেন মমতা। ধর্মের নামে সমাজকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা করছেন মোদী, বলে নিশানা শানান তিনি। পাশাপাশি আরএসএস-এর কার্যকলাপের উপর গভীর মনোযোগ দেওয়ার কথাও এদিন জনসভায় হাজির মানুষদের বলেন মমতা। নাম না করে বিজেপিকে সৃষ্টিছাড়া, বাঁধনহারা, ধান্দাবাজের দল বলে কটাক্ষ করে তাঁর প্রশ্ন, গদা, তরোয়াল হাতে নিয়ে কীভাবে রাজনীতি হতে পারে? বাংলায় এসব করে ভোট হয় না, বলে তাঁর হুঁশিয়ারি, ধর্ম বেচে খাবেন না। সরাসরি মোদীকে ফ্যাসিস্ট বলে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এখন সবার উপর নজরদারি চালাচ্ছে বিজেপি। এমনকী কালীঘাটের বাড়িতে সাধারণ কথা বলাও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের সবার ফোন ট্যাপ করছে কেন্দ্র।

৪২-এ ৪২ করার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানেন, শিলিগুড়ির মানুষের সমর্থন তাঁকে এই লক্ষ্যে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। সাম্প্রতিক অতীতে শিলিগুড়িতে তৃণমূলের পারফর্মেন্স যে খারাপ, তাও অজানা নয় তৃণমূল নেত্রীর। এবার এই প্রেক্ষিতেই, শিলিগুড়ির উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন, আপনাদের আশীর্বাদ থেকে যেন বঞ্চিত না হই। পরিশেষে বললেন, নতুন বছরে আপনারা তৃণমূলকে ভোট দেবেন, এটা আমার বিশ্বাস। তৃণমূল নেত্রীর আবেদন শিলিগুড়িতে ঘাসফুলের ভোটবাক্স ভরতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Comments are closed.