এবার মানবের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিতর্ক, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে গাইডলাইন তৈরি করতে চায় আলিমুদ্দিন।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট নিদান দিয়েছিল, রাজ্য, দেশ, দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও জোর দিতে হবে। এবছরই মার্চ মাসে যে রাজ্য সম্মেলন হয়েছে তাতে রাজ্যে সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর পেশ করা সাংগঠনিক রিপোর্টের ৬০ পৃষ্ঠায় একটা অনুচ্ছেদই লেখা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘…জনগনের কাছে আমাদের রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বক্তব্য প্রচার করার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার আরও বেশি ব্যবহার অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আমাদের পার্টি এখনও সর্বত্র সোশ্যাল মিডিয়ার হস্তক্ষেপ ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব পুরোপুরি অনুধাবন করেনি’।
পার্টি বলছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে জোর দিতে, কিন্তু ইদানীং কালে পার্টির নেতাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট ঘিরে যে জনমত উঠে আসছে বা যে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে তাতে অস্বস্তিই বরং বাড়ছে মুজফফর আহমেদ ভবনের। যার জেরে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ জারি করার কথা ভাবছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
পঞ্চায়েত ভোটের দিন সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ছেলে রাসেল আজিজের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক হয়। উত্তর দিনাজপুরে এক প্রিসাইডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে বলে ভোটের দিন দুপুরে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন রাসেল, যা নিয়ে সিআইডি মামলা করে। তারপর মহেশতলায় বিধানসভা ভোটে তৃতীয় হওয়ার পর সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তৃণমূল-বিজেপির সমালোচনা করেন তিনি। তার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের দূরাবস্থার জন্য বহু মানুষ সিপিএমকেই দায়ী করেন সেই পোস্টের কমেন্টে। এরপর, কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যকে তুলে ধরার জন্য রাজ্যে মাধ্যমিকে মেয়েদের ভাল রেজাল্ট করানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট করেন সিপিএমের চন্দননগরের এক প্রাথমিক সদস্য। সেই পোস্টে তিনি আবার ট্যাগ করেন মহিলা নেত্রী এবং রাজ্য কমিটির সদস্য রূপা বাগচিকে।
আর এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পোস্ট করে বিতর্কের কেন্দ্রে কলকাতার নেতা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সদস্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পাওয়া মানব মুখার্জির একটি ফেসবুক পোস্ট।
উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের পর ৯ জুন মানব মুখার্জি তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে তাঁর মূল বক্তব্য, মেধাবি ছেলেমেয়েগুলো সব রাজ্য ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সিপিএম চেষ্টা করবে ফের সোনার বাংলা ফিরিয়ে আনার, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই পোস্টের ওপর যে ধরনের কমেন্ট আসতে শুরু করেছে তা কোনওভাবেই স্বস্তিজনক নয় বলেই মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কারণ, কমেন্টে বহু মানুষই রাজ্যের বর্তমান অবস্থার জন্য সরাসরি সিপিএম পরিচালিত ৩৪ বছরের সরকারকেই দায়ী করেছেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট মনে করছে, নেতাদের এই পোস্টের জন্য পার্টির ভাবমূর্তি আরও খারাপ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ৩৪ বছরের সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ফের মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন একটা অংশের মানুষ।
মানব মুখার্জির এই পোস্টে কেউ কমেন্ট করেছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পার্টি কাজ করতে দেয়নি বলে। আবার কেউ জ্যোতি বসুর ‘ঐতিহাসিক ভুলে’র তত্ত্ব তুলে খোঁচা দিয়েছেন এই বলে, সিপিএমের একটাই সাফল্য হিস্টোরিক ব্লান্ডার।

কেউ আবার ইংরেজি তুলে দেওয়ার জন্য যেমন সিপিএমের সমালোচনা করেছেন। তেমনই কেউ লিখেছেন, ব্রেন ড্রেইন শুরু হয়েছিল আটের দশকেই। কেউ আবার জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলন করে কারখানা বন্ধের জন্য সমালোচনা করেছেন সিপিএমের।

সিপিএম সূত্রের খবর, মানব মুখার্জিসহ ইদানীং কালে একাধিক নেতার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে নেতৃত্ব খানিকটা ক্ষুব্ধ। নেতৃত্বের বক্তব্য, নিজেদের ইতিবাচক বক্তব্য তুলে না ধরে প্রতি ব্যাপারে তৃণমূলের সমালোচনার জন্য মানুষও পুরনো কথা মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। যা আদতে ক্ষতিই করছে পার্টির। কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা উচিত তা নিয়েও এবার সিরিয়াসলি ভাবা দরকার বলে জানিয়েছেন দলের এক নেতা। তাঁর বক্তব্য, দল সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে বলেছিল। কিন্তু তা ভুল ব্যবহারে লাভ তো হচ্ছেই না, বরং ক্ষতি হচ্ছে দলের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.