কে এই মইন কুরেশি, যাঁর কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠছে সিবিআই প্রধান এবং স্পেশাল ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে?

সিবিআইয়ের অন্দরে নজিরবিহীন অন্তর্কলহ এবং সংস্থার প্রধান অলোক ভার্মা ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী রাকেশ আস্থানার মধ্যে সাম্প্রতিক মাত্রাছাড়া তিক্ততার জেরে দুজনকেই সিবিআই থেকে সরিয়ে ছুটি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দুজনের বিরুদ্ধেই এখন তদন্ত করছে সেন্ট্রাল ভিজিলেন্স কমিশন। ভার্মা ও আস্থানা দু’জনেই পৃথকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনে যথাক্রমে সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। অলোক ভার্মা ও রাকেশ আস্থানা দু’জনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ এনেছেন, মইন কুরেশি তদন্তে ঘুষ নিয়ে অভিযুক্তদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টার।

কিন্তু কে এই মইন কুরেশি? কেন তাঁর নাম বারবার উঠে আসছে সিবিআইয়ের অন্দরে তৈরি হওয়া এই বেনজির পরিস্থিতিতে?

সংবাদপত্র টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এই মইন কুরেশিকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য যদি সঠিক হয়, তাহলে শুধু সদ্য প্রাক্তন সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মা বা স্পেশাল ডিরেক্টর আস্থানা নন, পূর্বতন দুই সিবিআই চিফ এ পি সিংহ ও রঞ্জিত সিনহার সঙ্গেও জড়িয়েছে কুরেশির নাম।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, মইন কুরেশি হলেন কানপুরের কোটিপতি মাংস ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাকি, অর্থ তছরূপ, হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারসহ একাধিক অভিযোগে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআইসহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একাধিক আধিকারিক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলেই জানা যায়।
মইন কুরেশির নাম প্রথম চর্চায় আসে ২০১৪ সালে, যখন জানা যায়, তৎকালীন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিনহার সঙ্গে দেখা করতে ১৫ মাসে প্রায় ৭০ বার তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন এই মইন কুরেশি। অলোক ভার্মা ও রাকেশ আস্থানা দ্বন্দ্বে সতীশ কুমার সানা নামে আর এক হায়দরাবাদ নিবাসী ব্যবসায়ীর নামও উঠে এসেছে। ২০১৪ সাল থেকে তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্ত চালাচ্ছিল সিবিআই। অভিযোগ, আদালতে যাতে সিবিআই তাঁর জামিনের বিরোধিতা না করে সে জন্য কুরেশির মাধ্যমে প্রাক্তন সিবিআই প্রধান রঞ্জিত সিনহার কাছে ১ কোটি টাকা ঘুষ পাঠিয়েছিলেন এই সতীশ শানা। এই বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এক অভিযুক্ত ও সিবিআই যাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে, এমন ব্যক্তির সঙ্গে রঞ্জিত সিনহা কেন দেখা করলেন এতবার, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে খোদ শীর্ষ আদালত। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সিবিআই প্রধান ছিলেন রঞ্জিত সিনহা।
এখানেই শেষ নয়, ২০১৪ সালের পর জানা যায়, পূর্বতন আরও এক সিবিআই প্রধান এ পি সিংহ’র সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল এই মইন কুরেশির। এ পি সিংহ ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সিবিআই-এর মাথায় ছিলেন। কী কারণে সিংহের সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ী কুরেশির এই যোগাযোগ তা নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল ইডি ও আয়কর দফতর। পরে সেই তদন্তভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এই ঘটনায় এ পি সিংহের বিরুদ্ধে কেস দায়ের করেছে সিবিআই। এরপরই এ পি সিংহকে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের(ইউপিএসসি) সদস্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে সিবিআই ছেড়ে ইউপিএসসিতেই যোগ দিয়েছিলেন এ পি সিংহ।
মইন কুরেশি ১৯৯৩ সালে কানপুরে এক ছোট কসাইখানা থেকে তাঁর ব্যবসা শুরু করে। বিগত কয়েক বছরে তাঁর সেই ব্যবসাই এখন দেশজুড়ে কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। দ্রুত উত্থান হতে থাকে তাঁর। এখন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাংস রফতানি ব্যবসা এই মইন কুরেশিরই। পাশাপাশি, নির্মাণ শিল্প ও ফ্যাশন জগতেও পা রেখেছেন এই হাই প্রফাইল অভিযুক্ত। অভিযোগ, কর ফাঁকি থেকে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাচার করেই দ্রুত ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন তিনি। আর আইনের হাত থেকে বাঁচতে গত কয়েক বছরে যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে।

Comments are closed.