সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে রাজ্যে এক নম্বরে সেলিম, তারপর রাজনীতিতে তিন নবাগত মমতাবালা ঠাকুর, সন্ধ্যা রায়, দেব

রাজ্যে লোকসভার সাংসদ ৪২ জন। তৃণমূলের ৩৪, কংগ্রেস ৪, সিপিএম ২, বিজেপি ২। জানেন কি, লোকসভায় পাঁচ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ করে নিজের এলাকা উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ মোট ২৫ কোটি টাকা (বছরে ৫ কোটি) খরচে রাজ্যের কোন সাংসদের কেমন পারফরমেন্স?
ভারত সরকারের স্ট্যাটিসটিক্স ও প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন মন্ত্রকের এমপি ল্যাড স্কিম রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচের নিরিখে রাজ্যে এক নম্বরে রায়গঞ্জের সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম। কিন্তু তাঁর পর সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে সবচেয়ে ভালো পারফরমেন্স রাজনীতিতে নবাগত তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এবং চলচ্চিত্র জগতের দুই তারকা প্রার্থী সন্ধ্যা রায় এবং দেবের। তৃণমূলের তো বটেই কংগ্রেস, বিজেপির পোড় খাওয়া সব নেতা, সাংসদদের থেকেও এলাকা উন্নয়নের টাকা ভালোভাবে খরচ করেছেন তাঁরা।
গত ৫ বছরে রায়গঞ্জ লোকসভা এলাকার উন্নয়নের জন্য মহম্মদ সেলিম কেন্দ্রের কাছে ২৮ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকার কাজের প্রস্তাব করেছিলেন। ভারত সরকার মঞ্জুর করে ২১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে মহম্মদ সেলিম খরচ করেছেন ২০ কোটি ৫ লক্ষ টাকা। শতাংশের হিসেবে ১১৫.১৪ শতাংশ, যা রাজ্যের মধ্যে এক নম্বর।
বনগাঁর তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির সদস্য মমতাবালা ঠাকুর। স্বামী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৬ সালের গোড়ায় রাজনীতিতে প্রবেশ মমতাবালা ঠাকুরের। এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মমতাবালা ঠাকুর ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন ২৭ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। কেন্দ্র মঞ্জুর করে ২৫ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ২৫ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা। যা শতাংশের হিসেবে ১১০.৬ শতাংশ।
সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে তারপরেই রয়েছেন রাজনীতিতে আরও দুই নবাগত। তাঁরা যে শুধু নবাগত তাই নন, তাঁরা অন্য জগতেরও। মেদিনীপুরের সন্ধ্যা রায় এবং ঘাটালের দেব। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তৃণমূল সাংসদ সন্ধ্যা রায় গত পাঁচ বছরে ২৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা প্রস্তাব করেছেন, যার পুরোটাই মঞ্জুর করেছে ভারত সরকার। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ২৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা, যা শতাংশের হিসেবে ১০৪.৪০ শতাংশ। সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে এরপরেই রয়েছেন অভিনেতা দেব। তৃণমূলের তারকা সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব ঘাটালের জন্য কেন্দ্রের কাছে ২৫ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন, তার পুরোটাই বরাদ্দ করেছে সরকার। তার মধ্যে ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন দেব। যা শতাংশের হিসেবে ১০২.৫১।
সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে শতাংশের হিসেবে (১১৪.৭০%) ঝাড়গ্রামের তৃণমূল সাংসদ উমা সোরেন যথেষ্ট এগিয়ে থাকলেও, নিজের জন্য পাঁচ বছরে বরাদ্দ ২৫ কোটি টাকার মধ্যে তিনি মাত্র ১০ কোটি টাকার কাজের প্রস্তাব করেছেন। কেন এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে এত কম টাকার কাজের প্রস্তাব তিনি করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সাংসদ তহবিলের টাকা বরাদ্দ এবং খরচের নিরিখে একদম নীচে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের সিপিএম সাংসদ বদরুদ্দোজা খান, বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী এবং দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়া।
বদরুদ্দোজা খান নিজের এলাকার জন্য প্রস্তাব করেছিলেন ১২ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকার কাজের। রিলিজ হয়েছে ১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। অধীররঞ্জন চৌধুরীর সাংসদ তহবিলের মাত্র ১০ কোটি টাকা রিলিজ হয়েছে। ভারত সরকার মঞ্জুর করেছে ৯ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা, খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়ার জন্য রিলিজ হয়েছে ১০ কোটি টাকা। যদিও নিজের কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়া বরাদ্দ করেছিলেন ২৫ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। ভারত সরকার অনুমোদন করেছে ৮ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে খরচ হয়েছে ৫ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা।

Comments are closed.