সিরিয়াস বিষয়ে কাজ করলেও মৃণাল সেনের মধ্যে ছিল ছেলেমানুষি, শিশুর সরলতা, উঠে এল স্মৃতিচারনায়

পৃথিবী ভাঙছে পুড়ছে, ছিন্নভিন্ন হচ্ছে, তবুও মানুষ বেঁচে থাকে মমত্বে- ভালোবাসায়-সহমর্মিতায়, নেপথ্যের এই শব্দবন্ধগুলিকে সাক্ষী রাখেই শনিবার কলকাতা স্মরণ করল মৃণাল সেনকে। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রয়াত হয়েছেন দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত বিশ্ব বরেণ্য চিত্র পরিচালক মৃণাল সেন। শনিবার গোর্কি সদনে তাঁর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল সকলের প্রিয় মৃণাল দা’র স্মরণ সভা। গোর্কি সদনে এদিন স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদায়, গৌতম ঘোষ, অঞ্জন দত্ত, কৌশিক গাঙ্গুলি, অনীক দত্ত, মাধবী মুখোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, মৃণাল পুত্র কুনাল সেনসহ তাঁর পরিবারের সদস্য, শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষ। শারীরিক কারণে এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও নিজের বার্তা পাঠান অপর্ণা সেন। শোক বার্তা পাঠানো হয় রাশিয়া ও বাংলাদেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকেও।
এদিনের স্মরণ সভা শুরু হয় মৃণাল সেনের প্রিয় ও আলোর পথযাত্রী গানটি দিয়ে। এরপর এক মিনিটের নীরবতা পালনের পর শুরু হয় মৃণাল স্মরণ। প্রায় তিন ঘণ্টার অনাড়ম্বর, ঘরোয়া স্মরণ সভায় মৃণাল সেনের কাছের, পরিবারের সদস্যরা ডুব দেন নানা পুরনো স্মৃতিতে। উঠে আসে মৃণাল সেনের কাজ, জীবন বোধ, সিনেমা, সমাজ রাজনীতি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার নানা কথা।
মৃণাল পুত্র কুণাল বলেন, তিনি বাবাকে বন্ধু ডাকতেন, কারণ তাঁকে নিজের বন্ধুর মতোই মনে হোত। ছেলের সঙ্গে বন্ধুর মতোই মিশতেন তিনি। দুজনে এক সঙ্গে ধূমপানও করতেন। কুনালের বন্ধুদের কাছেও তিনি ছিলেন খুব কাছের মৃণালদা। বাবার স্মৃতিচারণায় কুনাল জানান, কোনও দিন তিনি বাবাকে সিরিয়াসলি নেননি। কখনও ঠিক প্রাপ্তবয়স্ক মনে হয়েনি। নানা গল্প ও উদাহরণ থেকে বাবার কাছে জীবনবোধ শিখেছেন কুণাল। তাই মৃণাল সেন আজীবন তাঁর কাছে বন্ধুই, জানিয়েছেন কুনাল।
বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার বলেন, তাঁর সঙ্গে প্রায় সময় তর্ক বিতর্ক হোত মৃণাল সেনের। মজাও করতেন তিনি। নিজে যা বিশ্বাস করতেন তাই ফলাতে চাইতেন। তথাকথিত সোজা রাস্তায় কখনও হাঁটেননি।
মাধবী মুখোপাধ্যায় বলেন, তিনি কখনও আদর্শচ্যুত হতে দেখেননি মৃণাল সেনকে।
শ্রীলা মজুমদার, অঞ্জন দত্তরা  প্রিয় মৃণাল দা প্রসঙ্গেএদিন বলতে গিয়ে আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়েন। বলেন, প্রায় তাঁদের পরিবারের অংশ ছিলেন মৃণাল সেন। বাবার মতো ছিলেন। তাই এই চলে যাওয়া ব্যক্তিগত ক্ষতি।
এদিনের স্মরণ সভায় মৃণাল সেনের হাতের লেখা, তাঁর বিভিন্ন ছবি দিয়ে একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। প্রদর্শিত হয় ২০০৪ সালে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হওয়ার পর দূরদর্শনকে দেওয়া তাঁর একটি একান্ত সাক্ষাৎকারও।

Comments are closed.