একশো দিনের কাজের আইন রূপায়ন করার কাউন্সিলের সদস্য হলেন আরএসএসের পত্রিকা পাঞ্চজন্য’র সম্পাদক।

একশো দিনের কাজের প্রকল্প মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এম জি এন রেগা) রূপায়নের শীর্ষ পরিচালন সংস্থায় এবার গেরুয়াকরণের অভিযোগ। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের আইন রূপায়নের দায়িত্বে রয়েছে সেন্ট্রাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি কাউন্সিল (সিইজিসি)। ২০০৬ সালে এই কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। সম্প্রতি এই কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সাপ্তাহিক পত্রিকা পাঞ্চজন্য’র সম্পাদক হিতেশ শঙ্করকে। গত ১১ মে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এই নির্দেশিকা জারি করেছে। আগামী ২১ জুন এই নতুন কাউন্সিল কাজ শুরু করবে। শুধু পাঞ্চজন্য’র সম্পাদকই নন, কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী আধ্যাত্মিক সংগঠনের একাধিক সদস্যকেও কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ এই কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। যার জেরে পুরো বিষয়টি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
এই কাউন্সিলে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ছ’জন প্রতিনিধি থাকেন। এছাড়াও থাকেন ২০ জন বেসরকারি সদস্য। এই বেসরকারি সদস্য পদে আরএসএস এবং বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়েছে সেন্ট্রাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি কাউন্সিলে।

এর আগেও দেশের একাধিক প্রাতিষ্ঠানিক পদে আরএসএসের বিভিন্ন ব্যক্তিকে বসানোর অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। এবার একশো দিনের মতো একটি সামাজিক প্রকল্পেও আরএসএসের পদাধিকারীদের ঠাঁই দেওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, বামপন্থীরাই এই প্রকল্প চালু করার ক্ষেত্রে প্রধান উদ্যোগ নিয়েছিল। এখন এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যটাকেই ব্যর্থ করার চেষ্টা চলছে। কেউ এর টাকা লুট করছে তো কেউ রাজনীতি করছে। কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রর বক্তব্য, দেশের এত বড় একটি সামাজিক প্রকল্প এই এম জি এন রেগা’কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামীণ উন্নয়ন এবং তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সেখানে আরএসএসের ভাবধারার লোকজনকে বসালে প্রকল্পটির গুরুত্বই কমিয়ে দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে গত ১১ মে জারি হওয়া নির্দেশিকা থেকে জানা যাচ্ছে, পাঞ্চজন্য’র সম্পাদক হিতেশ শঙ্কর ছাড়াও সিইজিসি’র সদস্য করা হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন দিব্য প্রেম সেবা মিশনের শাখা ডিভাইন ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক সঞ্জয় চতুর্বেদীকে। এই ফাউন্ডেশনের প্রধান আরএসএস প্রচারক আশিস গৌতম। আর একটি হিন্দু আধ্যাত্মবাদী সংগঠন কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ কেন্দ্রের পদাধিকারী জি বাসুদেবকেও কাউন্সিল সদস্য করা হয়েছে। প্রবীণ আরএসএস প্রচারক একনাথ রাণাডে বিবেকানন্দ কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন কনফেডারেশন অফ ভলান্টারি অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা তথা বিজেপি নেতা সুধীর আগরওয়াল। আরএসএস এবং বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তিকে এই কাউন্সিলের বেসরকারি সদস্য মনোনীত করায় একশো দিনের কাজের এই প্রকল্প ভবিষ্যতে কোন দিশায় চলবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। কংগ্রেস, সিপিএমসহ বিরোধী দলগুলি গত কয়েক বছরে বহুবার অভিযোগ করেছে, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক জায়গায় আরএসএসের লোককে বসানো হচ্ছে। দেশের একাধিক রাজ্যে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে রাজ্যপাল পদেও বসানো হচ্ছে বলে শুরু হয়েছে বিতর্ক। লোকসভা ভোটের এক বছর আগে সেই বিতর্কই এবার নতুন মাত্রা পেল একশো দিনের কাজের রূপায়নকারী কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সরকার আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.