শনিবার বৃহত্তর বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নামছে ফ্রান্সের আন্দোলনকারীরা, প্যারিসের রাস্তায় সেনা-গাড়ি নামাল সরকার

ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্টে গত এক সপ্তাহ ধরেই অচল ফ্রান্স। স্তব্ধ হয়েছে জনজীবন। তারই মধ্যে শনিবার ফের বৃহত্তর বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। যার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ফ্রান্সজুড়ে। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে শুক্রবারই প্যারিসসহ দেশের নানা শহরের রাস্তায় নামানো হয়েছে সেনা বাহিনীর ব্যবহারের গাড়ি।
ফ্রান্সজুড়ে পেট্রোপণ্য ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চার সপ্তাহ ধরে চলছে আন্দোলন। প্রতিবাদের ব্যাপকতার কারণে জি ২০ সামিটের মাঝপথে তড়িঘড়ি দেশে ফিরেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকর।
যে আন্দোলন কেবল মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হয়েছিল, তা পরিবর্তিত হয়েছে প্রেসিডেন্টের ইস্তফার দাবিতে। ৪ সপ্তাহ পরেও প্যারিসে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ মুভমেন্টে-এর প্রভাব তো কমেইনি, বরং বিক্ষোভকারীরা শনিবার আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে চলেছে বলে ফরাসি মিডিয়া সূত্রে খবর।
বিপদের আশঙ্কা আঁচ করে, শনিবার প্যারিসসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় প্রায় ৮৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে বলে খবর। শুধু প্যারিসেই থাকবে ৮ হাজার পুলিশ কর্মী। আইফেল টাওয়ার, লুঁভর মিউজিয়ামসহ প্যারিসের সমস্ত দর্শনীয় স্থান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ দোকানপাট ও শপিং মল।
আন্দোলন ক্রমশ হিংসার পথে এগোচ্ছে। শুক্রবার, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য। প্যারিসের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহরের মেয়র। প্যারিস ‘দৃশ্যত থেমে গিয়েছে’ বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি জনসাধারণকে শহরের শান্তি বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনও কাজ তো হয়ইনি, আন্দোলনে সাড়া দিয়ে আম-জনতা পথে নেমেছে। ফ্রান্সে কম পক্ষে ২০০ টি হাই-স্কুলের পড়ুয়া প্রতিবাদে নেমেছে। ৭০০ র বেশি ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, প্যারিসের এক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তাদের ‘নিল ডাউন’ করে রাখে পুলিশ, যা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের পুলিশ এই শাস্তি দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে।

ফরাসি প্রশাসন মনে করছে, এই ‘ইয়েলো ভেস্ট’ মুভমেন্ট কেবল আর জ্বালানি মূল্য হ্রাসের এবং ট্যাক্স কমানোর দাবিতে থেমে নেই। পেট্রল জ্বালানিতে ট্যাক্স প্রত্যাহার করেও আন্দোলন থামানো যায়নি। আন্দোলনকারীদের হাতে ব্যানার, যাতে লেখা রয়েছে ‘জনগণ বিরক্ত’। উন্নততর দেশ গড়তে ৮ ই ডিসেম্বর, শনিবার আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মাঁকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেরোচ্ছেন না। গত শনিবার, আন্দোলনকারীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি। যদিও, প্রেসিডেন্টের এই অনুপস্থিতি ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলনকারীরা অসম্মানজনক বলে মনে করছে। বিক্ষোভ এতটাই চরম আকার নিয়েছে যে, সেনা বাহিনীর বিশেষ গাড়ি নামানো হয়েছে ফ্রান্সের রাস্তায়-রাস্তায়।
যদিও এই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে অন্তত একটা সমস্যার সমাধানে স্বস্তি পেয়েছে প্রশাসন। সেটা হল, দু’টি ট্রাক ইউনিয়নের মধ্যে একটি ইউনিয়ন আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে সরকারের তরফে ‘ওভার টাইম রেট’-এর প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর।

Comments are closed.