প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য গ্রেনেড লঞ্চার জোগাড় এবং মাও যোগের প্রমাণ রয়েছে ধৃত মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে, দাবি পুলিশের

ভারভারা রাওসহ দেশের পাঁচ বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার ও তাঁদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগ নিয়ে যখন প্রশ্নের মুখে পুণে পুলিশ, তখন সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল মহারাষ্ট্র প্রশাসন। শুক্রবার পুলিশ দাবি করল, ধৃতরা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। প্রধানমন্ত্রীকে খুনের চক্রান্ত চলছিল এবং তার জন্য গ্রেনেড লঞ্চারের ব্যবস্থাও করছিল মাওবাদীরা। ধৃতদের সঙ্গে মাওবাদীদের সুস্পষ্ট যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
শুক্রবার এবিষয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক করেন মহারাষ্ট্র পুলিশের এডিজি পরম বীর সিংহ। সেখানে তিনি জানান, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ তারিখে ভীমা কোরেগাঁওতে দলিত বিজয় দিবস উদযাপন নিয়ে যে হিংসা ছড়িয়েছিল, সেখানে বিদ্বেষমূলক ভাষণ দেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয় চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি। তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই ‘কবির কালা মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জুন মাসে পাঁচ সমাজকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে, একটি গভীর চক্রান্ত করেছে মাওবাদীরা এবং তাতে সরাসরি যুক্ত এই অভিযুক্তরা। এরপরই ইউএপিএ ধারা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মাওবাদীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মঙ্গলবার দেশের একাধিক শহরে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কবি, অধ্যাপক এবং মানবাধিকার কর্মী ভারভারা রাওসহ পাঁচ বিশিষ্ট সমাজকর্মীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গেও এদিন মুখ খুলেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের সঙ্গে মাওবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে, এবিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রমাণের জন্য তাঁদের কাছে হাজার হাজার নথি ও চিঠি রয়েছে বলেও দাবি পুলিশের। পুলিশের দাবি, এই বৃহত্তর চক্রান্তের অংশ হিসেবে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদেরও সংগঠিত করার চেষ্টা চলছিল, যাতে নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া যায়। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন মহারাষ্ট্র পুলিশের এডিজি। তিনি জানিয়েছেন, ভীমা কোরেগাঁওয়ের ঘটনায় গত জুন মাসে রোনা উইলসন নামে যে সমাজ কর্মীকে ধরা হয়েছিল, তাঁর লেখা ৩০ জুলাই, ২০১৭ সালের একটি চিঠি পাওয়া গেছে। যেখানে তিনি মাওবাদী নেতা কমরেড প্রকাশকে লিখেছেন, ‘আশা করি গ্রেনেড লঞ্চারের জন্য যে আট কোটি টাকার প্রয়োজন, সেই সম্বলিত যাবতীয় তথ্য আপনি পেয়ে গেছেন। রাজীব গান্ধীর কায়দায় মোদীরাজ খতম করতে কিছু পদক্ষেপ বাতলেছেন কমরেড কিষাণ ও তাঁর সহযোগীরা।’
এদিকে, ভীমা কোরেগাঁওয়ের ঘটনায় গত জুন মাসে ধৃত সমাজকর্মী সুরেন্দ্র গ্যাডলিংয়ের স্ত্রী এদিন শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আবেদন জানিয়েছেন, সম্প্রতি পুলিশের হাতে আটক ভারভারা রাওসহ অন্য পাঁচ সমাজকর্মীর মতো, তাঁর স্বামীসহ যাঁরা জুন মাসে ধরা পড়েছিলেন তাঁদেরও জেল থেকে ছেড়ে গৃহবন্দি রাখতে হবে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার একই সঙ্গে দিল্লি, মুম্বই, রাঁচি, গোয়া, ফারিদাবাদ, হায়দরাবাদের মতো দেশের একাধিক শহরে ১০ জন বিশিষ্ট সমাজকর্মীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুণে পুলিশ। মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ের দলিত ও উচ্চ বর্ণের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা, মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ভারভারা রাও, অরুণ ফেরেরা, গৌতম নওলাখা, সুধা ভরদ্বাজ, ভার্ণন গঞ্জালভেসের মতো কবি, লেখক আইনজীবীদের। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, রোনা উইলসন, সুধীর ধাওয়ালে, সোমা সেন ও মহেশ রাওয়াত নামে পাঁচজনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল।

Comments are closed.