ফ্রান্সের শ্রমিক শ্রেণী এবং সাধারণ মানুষের তীব্র আন্দোলন আসলে উদার অর্থনীতির সংকটঃ প্রভাত পট্টনায়েক

পেট্রোপণ্য এবং সাধারণ জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ফ্রান্সজুড়ে হাজার হাজার মানুষ ধারাবাহিকভাবে যে বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন, তাকে স্পষ্টতই উদার অর্থনীতির সংকট বলে ব্যাখ্যা করলেন বামপন্থী অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়েক। সিপিএমের মুখপত্র পিপলস ডেমোক্রেসি’র সাম্প্রতিক সংখ্যায় ফ্রান্সের ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করে প্রভাত পট্টনায়েক লিখেছেন, নয়া-উদার পুঁজিবাদের সংকটকে আরও স্পষ্টভাবে হাজির করেছে এই আন্দোলন। তাঁর বক্তব্য, খরচা কমানোর নাম করে সাধারণ মানুষের ওপর যেভাবে করের বোঝা চাপানো হয়েছে, তার প্রতিবাদে ফ্রান্সের মানুষ তীব্র আন্দোলনে নেমেছেন। যদিও মূলত পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতায় এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখন তা অন্যান্য ইস্যুতেও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

সিপিএম মুখপত্রে প্রভাত পট্টনায়েক আরও লেখেন, এই আন্দোলনে চাপে পড়ে গিয়েছে ফরাসি সরকার, তারা এই আন্দোলনকে চরম বামপন্থী এবং চরম ডানপন্থীদের সমন্বয় কিংবা তাদেরই অসন্তোষ বলে চিহ্নিত করার একটা চেষ্টাও চালাচ্ছে। এবং দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট বাহিনীকেই শক্তিশালী করবে। আসলে এই প্রবণতা শমিক শ্রেণী এবং সাধারণ মানুষের আন্দোলন, ক্ষোভকে ফ্যাসিজমের তকমা দিয়ে লঘু করার একটা চেষ্টা। এরপরই প্রট্টনায়েক লিখেছেন, এটা ঠিক, ফ্রান্সে শক্তিশালী ফ্যাসিস্ট আন্দোলন রয়েছে, কিন্তু তার সঙ্গে ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্টের কোনও সম্পর্ক নেই। এবং এই আন্দোলনের সুফল কারা পাবে তা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করবে।
বামপন্থী অর্থনীতিবিদ পট্টনায়েক লিখেছেন, সম্প্রতি টেলিভিশন ভাষণে ফরাসি রাষ্ট্রপতি আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী কিছু ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি, তেলের দামের কমানো ইত্যাদি। কিন্তু বড়লোক বা ধনীদের ওপর কর চাপানোর কোনও ঘোষণা তিনি করেননি, বরং তার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও স্পষ্ট করেছেন। কারণ তা ফলে আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজি তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হবে।
প্রভাত পট্টনায়েকের ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রপতি মাকরেঁর এই ঘোষণা হয়তো আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ সাময়িকভাবে প্রশমিত করতে কিছুটা সাহায্য করবে, হয়তো আপাতত শান্তি ফিরবে কিছুটা। কিন্তু তাতে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধে মিলবে না। বরং বড়লোকদের কর ছাড় এবং জন পরিষেবামূলক বরাদ্দ ছাঁটাই করে খরচা কমানোর যে উদ্যোগ মাকরঁ প্রশাসন নিয়েছে, তাতে শেষমেশ গরিব, খেটে খাওয়া এবং শ্রমিক শ্রেণীর ওপর চাপ আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, পেট্রোপণ্য এবং সাধারণ জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বামপন্থীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া ইয়েলো ভেস্ট মুভমেন্ট প্রায় এক মাসে পড়ল। সামনে বড়দিন হলেও, আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ থেকে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী শামিল হচ্ছে আন্দোলনে। তাতে পিছু হঠে মাকরঁ প্রশাসন কিছু আপৎকালীন সুরাহার কথা ঘোষণা করলেও, তা মানতে রাজি নন আন্দোলনকারী। এই পরিস্থিতিতে এদেশের সিপিএমের পক্ষ থেকেও মাকরঁ সরকারের সমালোচনা করে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।

Comments are closed.