রাফাল ইস্যুতে এবার নয়া বিতর্ক, চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রশ্ন তুলল ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেরপা

রাফাল ইস্যু নিয়ে বিতর্ক, অস্বস্তি পিছু ছাড়ছে না মোদী সরকারের। একদিকে, বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মাত্রাছাড়া দুর্নীতি হয়েছে রাফাল চুক্তিতে। এতে বিরোধীরা সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। সুপ্রিম কোর্টেও ইতিমধ্যে চলছে মামলা।
শুক্রবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী মধ্যপ্রদেশের বিদিশার সভা থেকে রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ বিমান তৈরির পারদর্শিতা না থাকা অনিল আম্বানীকে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে কেন্দ্র। কয়েক হাজার কোটি টাকা মোদী, তাঁর ‘বন্ধু’ অনিল আম্বানীর পকেটে ভরে দিয়েছেন, অভিযোগ রাহুলের।
ঠিক এই সময়েই, নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি বাড়াল ফ্রান্সের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ভারতেই শুধু নয়, ফ্রান্সেও রাফাল চুক্তিতে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ‘শেরপা’ নামে এক ফরাসি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার দাবি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ঘনিষ্ঠদের ‘সুবিধে’ পাইয়ে দিয়েছেন। রাফাল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফ্রান্সের আর্থিক তদন্তকারী আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানায় ‘শেরপা’। সংবাদমাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়ে দায়ের করা অভিযোগের কথা জানিয়েছে ফরাসি এই সংস্থা।
ফ্রান্সের সংবাদসংস্থা ‘মিডিয়াপোর্ট’-এ রাফাল চুক্তি নিয়ে ‘স্টিং অপারেশন’ থেকে পাওয়া তথ্য এবং তাদের নিজেদের কাছে যে সমস্ত তথ্য রয়েছে তাতে ফরাসি সংস্থা ‘শেরপা’র দাবি, তারা একরকমভাবে নিশ্চিত যে দুর্নীতি হয়েছে। তাদের আশা, রাফাল চুক্তি নিয়ে সত্য উদঘাটন হবে।
এর আগে, কংগ্রেস বারবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাফাল চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করে এসেছে। যদিও যুদ্ধ বিমান প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন এবং বিজেপি সরকার বিরোধীদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ড্যাসল্টের সিইও এরিক ট্রপিয়ার দাবি করেন, অনিল আম্বানীর ‘রিলায়েন্স’ ছাড়া আরও ৩০ টি পার্টনারকে তাঁরা পছন্দ করেছিলেন। রিলায়েন্স ছিল তাদের ‘অফসেট পার্টনার’।
চুক্তি অনুযায়ী, ড্যাসল্ট অর্ধেক অর্থ, প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ভারতের ফার্মে। অনিল আম্বানীর সংস্থাকে যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরির বরাত দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে প্যারিসে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাদঁ-এর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাফাল চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। সম্প্রতি ওলাদঁ একটি সাক্ষাৎকারে জানান, রাফাল চুক্তিতে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর যুক্ত হওয়া নিয়ে ফ্রান্স সরকারের কিছু করার ছিল না। কারণ, রিলায়েন্স ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প সংস্থার নাম ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
রাফাল চুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। রাফালের দাম নিয়ে সরাসরি কোনও প্রশ্ন না তুললেও চুক্তির পদ্ধতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত।
প্রতিটি জনসভাতেই রাফাল চুক্তি নিয়ে মোদীর দিকে আক্রমণ শানাচ্ছেন রাহুল গান্ধী। সেখানে ‘শেরপা’-র এই অভিযোগ ২০১৯-এর ভোটের
আগে কেন্দ্রের অস্বস্তি আরও বাড়াল।

Comments are closed.