‘রাফাল চুক্তির ফাইল রয়েছে মনোহর পরিক্করের বেডরুমে’, কংগ্রেসের প্রকাশিত অডিও টেপে উত্তাল সংসদ, অস্বস্তিতে বিজেপি

ফের মাথাচাড়া দিল রাফাল দুর্নীতি ইস্যু।
বুধবার সকাল থেকে একটি অডিও রেকর্ডিংকে ঘিরে তোলপাড় লোকসভা, তোলপাড় গোটা দেশ। ওই অডিও ক্লিপে শোনা গিয়েছে, বিতর্কিত রাফাল ডিলের ফাইল রয়েছে গোয়ার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করের বাড়িতে!
এদিন সংসদ শুরুর আগে এই অডিও ক্লিপিংস শুনিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূরযওয়ালা। তিনি দাবি করেন, এই অডিও ক্লিপিং থেকে পরিষ্কার, কেন রাফাল চুক্তির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি করতে চাইছে না মোদী সরকার। তাঁর আরও দাবি, ওই অডিও টেপে গোয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রাণের সঙ্গে অপরিচিত এক ব্যক্তির কথোপকথন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে ফ্রান্সের রাফাল চুক্তি সই হওয়ার সময় মনোহর পরিক্কর ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ২০১৭ সালে সেই দায়িত্ব ছেড়ে তিনি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হন। এই পরিস্থিতিতেই বিস্ফোরক অডিও ক্লিপিং সামনে এনে বিজেপির মাথা ব্যথা বাড়াল কংগ্রেস।
ওই ক্লিপিংয়ে যাঁর গলা বিশ্বজিৎ রাণের বলে দাবি বলে করছে কংগ্রেস, তাঁকে বলতে শোনা যায়, মনোহর পারিক্কর নিজে নাকি স্বীকার করেছেন, তাঁর বেডরুমেই রয়েছে রাফাল চুক্তির ফাইল। অন্য প্রান্তের অচেনা ব্যক্তির কণ্ঠস্বরে বিস্ময়, ‘কী বলছেন আপনি!’ এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে বিশ্বজিৎ রাণের কণ্ঠস্বর, ‘আপনি চাইলে ক্রস চেক করে দেখতে পারেন। আপনি তো মন্ত্রিসভারও ঘনিষ্ঠ।’
এরপরই এই অডিও টেপের প্রসঙ্গ তুলে সংসদে রাফাল চুক্তির দুর্নীতি নিয়ে সরব হয় কংগ্রেসসহ সবকটি বিরোধী দল। রাহুল গান্ধী রাফাল চুক্তির দুর্নীতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন মোদীকে এবং অডিও টেপ সংসদে শোনানোর অনুমতি চান স্পিকারের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ উঠে দাঁড়িয়ে রাহুলের এই আর্জি খারিজ করেন। তীব্র হট্টগোল শুরু হয়ে যায় সংসদে।
যদিও এই অডিওর কথোপকথন তাঁর নয় বলে দাবি করেছেন বিশ্বজিৎ রাণে। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কখনও রাফাল চুক্তি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। এই অডিও ক্লিপিং মিথ্যে। মুখ্যমন্ত্রী পরিক্করও এই বিতর্কের জবাবে ট্যুইট করেন, ‘রাফাল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কংগ্রেসের মিথ্যাচার সামনে আসার পরও বেপরোয়াভাবে তথ্য বিকৃতির চেষ্টা করছে কংগ্রেস।’
শেষমেশ ওই অডিও লোকসভায় চালানোর অনুমতি দেননি স্পিকার। এতে দমে না গিয়ে রাহুল আবারও রাফাল ডিল নিয়ে অভিযোগ করেন, সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে, কেন রিলায়েন্স গোষ্ঠীকেই বরাত দেওয়া হয়েছে যুদ্ধ বিমান তৈরির। রাহুল গান্ধী রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কর্ণধার অনিল আম্বানীকে একজন ব্যর্থ শিল্পপতি বলে কটাক্ষ করেন।
এরপর তৃণমূলও কটাক্ষ হানে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকে। লোকসভায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, মেঘনাথ যেমন মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করতেন, নরেন্দ্র মোদীও তেমনি অরুণ জেটলির আড়াল থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। কেন রাফাল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে রাজি হচ্ছে না কেন্দ্র। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও রাফাল দুর্নীতি নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন।

Comments are closed.