নিউজ পোর্টাল, দ্য ওয়্যারঃ ঋণখেলাপিদের তালিকা ২০১৫ সালের শুরুতে মোদীকে পাঠিয়েছিলেন রঘুরাম রাজন, নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা

ঋণখেলাপিদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন, এক আরটিআই মারফত এরকম তথ্যই উঠে এল। নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তাদের তরফে এই মর্মে একটি তথ্য জানার অধিকার আইনে আরটিআই করা হয়েছিল। আর এর জবাবে যে উত্তর এসেছে সেখানেই এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মোদী প্রধানমন্ত্রী পদে বসার আট মাসের মধ্যেই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে তাঁকে সতর্ক করেছিলেন তৎকালীন আরবিআই গভর্নর রঘুরাম রাজন। যদিও কোনও ব্যবস্থা তখন নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির সামনে হাজির হয়ে রাজন জানিয়েছিলেন, দেশের প্রথম সারির ঋণ খেলাপিদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে করেছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা ওই ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি। এরপরই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। বিরোধীরা চেপে ধরে কেন্দ্রকে। বিজয় মালিয়া, মেহুল চোক্সি, নীরব মোদীরা কেন্দ্রের বদান্যতায় ঋণ না মিটিয়ে দেশ ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে কেন্দ্রের সমালোচনা করে সবকটি বিরোধী দল।
এরপরই এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে ‘দ্য ওয়্যার’ আরটিআই করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, অর্থ মন্ত্রক ও আরবিআইতে।
যে সময় রাজনের ওই বয়ান সামনে আসে, তখন অনেক সংবাদমাধ্যমের তরফে বলা হয়েছিল, ওই তালিকা মোদীকে নয় বরং তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকে পাঠিয়েছিলেন আরবিআই গভর্নর। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী ও মনমোহন সিংহ দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই রঘুরাম রাজন আরবিআই-এর মাথায় ছিলেন। কিন্তু আরটিআই তথ্য বলছে, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম আট মাসের মধ্যেই তাঁকে এই তালিকা পাঠিয়েছিলেন রাজন। ‘দ্য ওয়্যার’এর দাবি,  আরটিআই-এর যে উত্তর তারা পেয়েছে, তাতে স্পষ্ট, রঘুরাম রাজন, মোদীকে ওই তালিকা ও চিঠি পাঠিয়েছিলেন ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছাড়াও ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকেও।
চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির প্রধান মুরলী মনোহর যোশীর অনুরোধে কমিটির কাছে ঋণ খেলাপিদের নিয়ে নিজের বক্তব্য জানতে এসে ওই চিঠির কথা জানিয়েছিলেন রঘুরাম রাজন। তবে সেসময় কোনও প্রধানমন্ত্রীর নাম তিনি নেননি, তাই মোদী না মনমোহন সিংহ কার কাছে তিনি চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল।
আরবিআইয়ের তরফে এই আরটিআইয়ের উত্তরে জানানো হয়েছে, রাজন যে তালিকা পাঠিয়েছিলেন তার উপর ভিত্তি করে এখন তদন্ত চালাচ্ছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু কী ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে, তা সরকার খোলসা করে জানায়নি। যদিও ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই অভিযুক্তদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছেন। তবে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বা এই বিষয়ে আরবিআই, অর্থমন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর এর মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, তা এই আরটিআই-এর প্রেক্ষিতে জবাব দেয়নি আরবিআই, বিষয়টি গোপনীয় বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
‘দ্য ওয়্যার’এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, তাদের করা আরটিআই এর প্রেক্ষিতে আরবিআই রাজনের পাঠানো চিঠির দিনক্ষণ বলে দিলেও এবিষয় কিছুই বলতে চাইছে না প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা অর্থমন্ত্রক। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে পাঠানো উত্তরে বলা হয়েছে, এই বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ার অধিকার আরটিআই-এর আওতায় পড়ে না। ‘দ্য ওয়্যার’ এর প্রতিবেদনের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সেক্রেটারি এবং  ইনফরমেশন অফিসার প্রভীন কুমার জানিয়েছেন, যে বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে তা আরটিআই অ্যাক্টের ২ নম্বর ধারার আওতায় পড়ে না, তাই এবিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
তবে ‘দ্য ওয়্যার’এর প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ইনফর্মেশন কমিশনার শৈলেশ গান্ধী জানিয়েছেন, আরটিআই-এর উত্তরে পিএমও যে জবাব পাঠিয়েছে, তা আইনত ঠিক না। তাঁর মতে, বিষয়টি এখনও পর্যন্ত যে অবস্থায় রয়েছে, সেই তথ্য দেওয়া উচিত। রাজনের দেওয়া চিঠির ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও, জানানো যেতে পারে। ‘দ্য ওয়্যার’এর পাঠানো আরটিআই আবেদনের ভিত্তিতে পিএমও’র মতো অনেকটা একই রকম অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকও। আবেদন করার ৪০ দিনের মাথায় গত ২৪ অক্টোবর তারা জাবাবে বলেছে, এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই। দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি এ কে ঘোষ জবাবে আরও জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তথ্য পেতে আরটিআই আবেদনটি সংশ্লিষ্ট আরও চারটি বিভাগের কাছে ফরওয়ার্ড করে দেওয়া হয়েছে।
এখানেই প্রশ্ন জাগছে, আরবিআই যেখানে বলে দিচ্ছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল, চিঠির তারিখ ও কী মর্মে চিঠি পাঠানো হয়েছিল তাও বলে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে পিএমও এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবিষয়ে তাদের বিশেষ কিছু জানা নেই বলে দায় কীভাবে এড়িয়ে যেতে পারে?

Comments are closed.