নোট বাতিল ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে করেছিলেন ঘনিষ্ঠদের সুযোগ পাইয়ে দিতেঃ রাহুল গান্ধীর

নোট বাতিল ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে কড়া আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাহুল বলেন, ‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কোনও ভুল পদক্ষেপ ছিল না, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল, যাতে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া যায়।’ বুধবারই আরবিআই জানিয়ে দিয়েছে, নোট বাতিলের সময় বাজারে যত টাকা ছিল তার ৯৯.৩ শতাংশ টাকাই ব্যাঙ্কে ফেরত চলে এসেছে। এরপরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তাহলে নোট বাতিল করে লাভটা কী হল, প্রায় সব টাকাই যদি সরকারের ঘরে ফেরত চলে আসে তাহলে, কালো টাকা আটকানোর যে দাবি করেছিল সরকার তা গেল কোথায়! যদিও এদিন এই বিষয়ে সাফাই দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র কালো টাকা উদ্ধার করাই নোট বাতিলের উদ্দেশ্য ছিল না। এর ফলে নতুন অনেক করদাতাকে শনাক্ত করা গেছে। বেড়েছে কর আদায়ের পরিমাণ। তাঁর দাবি যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কর ফাঁকি দিচ্ছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করে জরিমানা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল চুক্তি ইস্যুতে ক্রমে চড়ছে রাজনীতির উত্তাপ। সম্মুখ সমরে নেমেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির (জেপিসি) কথা মনে করিয়ে দিয়ে ট্যুইট করেন রাহুল। বলেন, ২৪ ঘন্টা অতিক্রম হতে আর ছয় ঘণ্টা বাকি। যুব ভারত অপেক্ষা করছে। আশা করছি আপনি মোদীজি ও অনিল আম্বানীজিকে আপনার কথা বোঝাতে সমর্থ হবেন ও জেপিসি গঠনের আবেদন গ্রাহ্য হবে। এদিন এক সাংবাদিক বৈঠকেও এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাহুল। ৭০ বছরের পুরনো এইচএএল’কে (হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড) ছেড়ে কেন সদ্য গঠিত অনিল আম্বানীর সংস্থাকে এই সুযোগ দেওয়া হল, তা জানতে চান তিনি।
বুধবারই এই ইস্যুতে মুখ খুলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। রাফাল চুক্তি ইস্যুতে কংগ্রেস মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন দেশের বর্তমান অর্থমন্ত্রী। রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তিনি যে কতটা অপরিণত তার প্রমাণ এই মিথ্যা অভিযোগ। বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এভাবে রাজনীতি করে দেশের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছে কংগ্রেস। অরুণ জেটলির মতে, দুর্নীতির অঙ্ক নিয়ে লোকসভায় একরকম আর দলীয় জনসভায় অন্য রকম পরিসংখ্যান দিয়েছেন রাহুল। এটাই প্রমাণ করে মিথ্যাচার করছে কংগ্রেস। জেটলির আরও দাবি ছিল, কংগ্রেস আমলের তুলনায় বিজেপি এই চুক্তির দর কষাকষিতে অনেকটা বেশি সফল। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, কংগ্রেস আমলে এই চুক্তির যা খরচ ভাবা হচ্ছিল, বিজেপি এসে তা বেশ কিছু শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
বুধবার অরুন জেটলির এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরই রাহুল দাবি করেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যৌথ সংসদীয় দল গড়ে রাফাল চুক্তির নামে এই বৃহৎ জালিয়াতির তদন্ত হোক, তাহলেই বোঝা যাবে কী সত্য আর কী মিথ্যা। নরেন্দ্র মোদী ও অনিল আম্বানীর নাম না করে বলেছিলেন, সরকারের প্রধান তাঁর বন্ধুকে বাঁচাতে চাইছেন। অরুণ জেটলিকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের ব্যাপারে দল ও সরকারের প্রধানকে রাজি করান। রাহুলের এই দাবিকে কটাক্ষ করে আবার বুধবার সন্ধ্যায় ট্যুইট করেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। তিনি বলেন, কংগ্রেসের মত মিথ্যাবাদী দল (ঝুটি পার্টি কংগ্রেস) থাকতে, জেপিসি (জয়েন্ট পার্লামন্টরি কমিটি’র) কী প্রয়োজন!

Comments are closed.