সিবিআই বিতর্কে চাঞ্চল্যকর মোড়, দুবাইয়ে কর্মরত এক ‘র’ অফিসারের ওপর নজর রাখছে পিএমও, প্রকাশ সানডে গার্ডিয়ানে

সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার ঘুষকাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনল ‘সানডে গার্ডিয়ান’।
দেশ বিরোধীদের সঙ্গে সন্দেহজনক সংযোগের তথ্য পাওয়ার পর দেশের প্রধান গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর এক শীর্ষ আধিকারিকের উপর নজর রাখছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও)। এমনটাই দাবি করা হয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘সানডে গার্ডিয়ান’এর এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের দাবি, এই মুহূর্তে দুবাইয়ে কর্মরত রয়েছেন ওই ‘র’ অফিসার। ওই ‘র’ অফিসার কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তি, যাঁদের মধ্যে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ঘনিষ্ঠ লোকজনও আছেন বলে খবর, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। এই ‘র’ অফিসারের নাম আসে রাকেশ আস্থানাকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে বয়ান দেওয়া সতীশ সানার কথায়।
এর আগে এই ‘র’ অফিসারের সঙ্গে মনোজ প্রসাদ নামে দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ীর যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছিল। উত্তর প্রদেশের মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির মামলায় সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার হয়ে তোলা আদায়ের অভিযোগে ওই ব্যবসায়ীকে গত ১৬ অক্টোবর গ্রেফতার করেছে সিবিআই। এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন মইন কুরেশি মামলায় অন্যতম আর এক অভিযুক্ত সতীশ সানা। তিনি সিবিআই তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, সিবিআই-এর চার্জশিট থেকে বাঁচতে তিনি মনোজ প্রসাদ নামে ওই ব্যবসায়ীর হাত দিয়ে ঘুষ পাঠিয়েছিলেন। সতীশ জানিয়েছেন, ওই ব্যবসায়ী তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে রাকেশ আস্থানাসহ অন্যান্য শীর্ষ সিবিআই আধিকারিক এবং ‘র’-এর অফিসারদের যোগাযোগ আছে। যদিও রাকেশ আস্থানা নিজে সতীশ সানার এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদের কোনও দিন দেখা হয়নি। সূত্রের খবর, দুবাইতে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিংয়ের নিজস্ব ফার্ম আছে ওই অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর।
‘সানডে গার্ডিয়ান’এর এই প্রতিবেদনে প্রকাশ, ভারতের যেসব আইএএস এবং আইপিএস অফিসার দুবাই ও আবু ধাবিতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নিজেদের টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদ। ২০১৬ সালে নোট বাতিলের পরবর্তী সময়ে এই ধরনের বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বেড়েছিল। ‘সানডে গার্ডিয়ান’এর দাবি, তারা সরাসরি রাকেশ আস্থানার কাছ থেকে এই সব বিষয়ের সত্যতা জানতে চেয়েছিল, কিন্তু তাঁর তরফ থেকে কোনও উত্তর মেলেনি।
সতীশ সানার যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে সিবিআই এফআইআর করে এবং যার জেরে তাঁর সহযোগী সিবিআই আধিকারিক দেবেন্দ্রর বর্মাকে গ্রেফতার করা হয়, সেই অভিযোগে তিনি আরও দুই আইপিএস অফিসারের নাম উল্লেখ করেছিলেন বলে সূত্রের খবর। তাঁরা হলেন পারভাজ হায়াত ও সামান্ত গোয়েল। আস্থানার সাথে গোয়েলের ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্কও ছিল।
এই সামান্ত গোয়েল ১৯৮৪ ব্যাচের পঞ্জাব ক্যাডারের আইপিএস অফিসার। বর্তমানে ‘র’-এর স্পেশাল ডিরেক্টর পদে রয়েছেন। দুবাইয়ের যে ‘র’ অফিসারের উপর নজর রাখছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, তার অভিভাবক হিসাবে দেখা হয় এই গোয়েলকে, প্রতিবেদনটিতে এমনই দাবি করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির আরও দাবি, ওই অভিযুক্ত ‘র’ অফিসার এবং সামান্ত গোয়েলের সঙ্গে বেশ কিছু সন্দেহভাজন ব্যক্তির একসাথে ছবি তাদের কাছে আছে।
‘সানডে গার্ডিয়ান’এর দাবি, ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদের নাম প্রথম শোনা যায় জুন মাসে, যখন দুবাইস্থিত আর এক ব্যবসায়ী দানিশ শাহ তাঁর নাম জানিয়েছিলেন। দানিশ শাহ সিবিআইকে ব্যবসায়ী মনোজ প্রসাদ, আইপিএস অফিসার সামান্ত গোয়েল ও আরও কিছু ‘র’ আধিকারিকের নাম বলেছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) এক অফিসারের নামেও। বলেছিলেন, দুবাইয়ের এক সন্দেহভাজন আইএসআই এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার যে অভিযোগ উঠেছে, এই আধিকারিকরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
এয়ারসেল অ্যাক্সিস মামলায় আবার রাজেশ্বর সিংহ নামে এই ইডি অফিসারের নাম জড়ায়। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা রিপোর্টে অর্থ মন্ত্রক যে তথ্য পেশ করে, তাতে সিংহকে কোর্টের নজরদারিতে চলা এই তদন্ত থেকে সরানোর সুপারিশও করা হয়। যদিও ইডি ডিরেক্টর কর্ণাল সিংহ এই অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি ‘র’ রিপোর্টকে বোগাস বলেন।
প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ, এই মনোজ প্রসাদ নামের দুবাইয়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে যাঁরা মেলামেশা করেন, তাঁর মধ্যে অনেকে আবার পারভেজ মুশারফের সম্পত্তি, বিনিয়োগের দিকগুলিও সামলান। সূত্রের খবর, এই যাবতীয় বিষয় মাথায় রেখেই ওই সংশ্লিষ্ট ‘র’ আধিকারিকের উপর নজর রাখছে পিএমও।

Comments are closed.