সিবিআইয়ে নজিরবিহীন সংঘাত কংগ্রেসের তৈরি সংস্কৃতিরই ফল, মোদীর পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ আরএসএসের

সম্প্রতি দেশের প্রধান তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর অন্দরে নজিরবিহীন সংঘাতের জেরে ইতিমধ্যেই সংস্থাটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছোয় যে, হস্তক্ষেপ করতে হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। দু’জনকেই আপাতত সিবিআই থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিবিআই প্রধানকে সরানো নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিরোধীরা। বিশেষ করে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, মোদী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আস্থানাকে বাঁচাতে এবং রাফাল তদন্ত বন্ধ করতেই সরানো হয়েছে অলোক ভার্মাকে।
এই ইস্যুতে লাগাতার বিতর্কের মধ্যে এবার কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধীদের মোকাবিলায় নামল আরএসএস। সিবিআই ইস্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আরএসএস-এর ইংরেজি মুখপত্র অর্গানাইজারে। প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে, সিবিআইসহ এই ধরনের সংস্থার অভ্যন্তরে যে অরাজকতা শুরু হয়েছে, ক্ষমতার শীর্ষে যাওয়ার জন্য যে প্রতিযোগিতা, হিংসাত্মক আচরণ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তা কংগ্রেসের চাপানো সংস্কৃতি ও দীর্ঘদিন ধরে লালিত হওয়া সেই সংস্কৃতির ফল।
যেভাবে সিবিআই প্রধানের পদ থেকে অলোক ভার্মাকে সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র, বিরোধীরা দাবি করেছে তা সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধিতে এবং প্রতিহিংসায় ব্যবহার করছে কেন্দ্র। বিরোধীদের এই দাবিকেও এক হাত নেওয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, মিছে কান্না কাঁদছে তারা। প্রতিবেদনের দাবি, বিরোধীরা এমন ভাব করছে যেন তারা ধোয়া তুলসি পাতা এবং তাদের চিন্তাভাবনা খুব মহান। গাদা গাদা পিআইএল জমা পড়েছে আদালতে, যেন বিচারব্যবস্থায় কোনও গলদ নেই।
আরএসএস মুখপত্রের প্রতিবেদনের দাবি, ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকে এবং তার পরেও সিবিআই ও বিচারব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কোনও সরকারই এই সব ক্ষেত্রে শুদ্ধিকরণের সাহস দেখায়নি। বিকিয়ে যাওয়া, সুবিধাবাদী অফিসার সবসময়েই ছিল, যারা তাদের রাজনৈতিক প্রভুদের কথায় ওঠানামা করে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ইতিহাস খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, গণতন্ত্র হোক বা নৈরাজ্য, শাসকরা সব সময় দুষ্কৃতী ও দুর্নীতিগ্রস্থদের ব্যবহার করেছে ক্ষমতায় আসতে ও টিকে থাকতে। প্রতিবেদনের দাবি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে আজ দেশের প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানেই কম-বেশি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা কাম্য না।
দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারব্যবস্থা স্বাধীনতা, স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে। কলোজিয়াম প্রথার মাধ্যমে বিচারপতিরাই হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বেছে নেন। কিন্তু তাঁরাও নিশ্চিত করতে পারেন না, সেই ব্যক্তি ভবিষ্যতে কোনও দুর্নীতিতে জড়াবেন না।
প্রতিবেদনের দাবি, স্বাধীন ভারতের ৭১ বছরের মধ্যে ৬০ বছর দেশ শাসন করেছে কংগ্রেস, তাই আজ তারা দুর্নীতি দুর্নীতি নিয়ে চিৎকার করে কুমীরের কান্না কাঁদতে পারে না।
প্রতিবেদনে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি এবং অতীত অচলাবস্থার অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়েছে, সিবিআই হোক বা সেন্টারল ভিজিলেন্স কমিশন (সিভিসি) বা আইবি, সময় এসেছে সিস্টেমে পরিবর্তন এনে তা সচ্ছ করার। যেখানে ভয়হীনতার সঙ্গে স্বচ্ছভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।

Comments are closed.