প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র আন্দোলনকে ‘গুণ্ডামি’ আখ্যা দিয়ে এর পেছনে মাওবাদী হাত থাকার ইঙ্গিত আরএসএস-এর মুখপত্র অর্গানাইজারে

জেএনইউ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আগেই করেছিল বিজেপি এবং আরএসএস। এবার কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের তীব্র সমালোচনায় আরএসএস।
হিন্দু হস্টেলে থাকতে দেওয়ার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভের জেরে এবছর প্রেসিডেন্সির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে করতে পারেনি প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তে গত ১১ সেপ্টেম্বর নন্দনে স্বল্প পরিসরে সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান করতে বাধ্য হয় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে, আরএসএসের মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’এ গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের। তাদের আন্দোলনকে ‘গুণ্ডামি’ আখ্যা দিয়ে এর পেছনে মাওবাদী হাত থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সমাবর্তন প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাস থেকে সরে নন্দনে হওয়ার ঘটনায় যথেষ্ট বিস্মিত দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারপ্রাপ্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং ভারতরত্ন বিজ্ঞানী  সিএনআর রাও। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বাধা প্রদানকারী আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়ে দুজনেই যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, ওই দিন নন্দনে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সিএনআর রাও দু’জনেই উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু উগ্র ছাত্র ছাত্রীর আন্দোলন বিক্ষোভের জেরে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রেসিডেন্সি কলেজ, যা বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে এবছর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। প্রেসিডেন্সির গরিমাকে ধ্বংস ও নষ্ট করে তাকে একটি কারখানার (ফ্যাক্টরি) চেহারা দিতে চাইছে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। তবে প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের শুধু মুণ্ডপাতই করা হয়নি, আরএসএস-এর মুখপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি ও সন্দেহভাজন ব্যক্তি দেশজুড়েই প্রসিদ্ধ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে, যাতে ছাত্র আন্দোলনের নামে গুণ্ডামি, সমাজবিরোধী কার্যকলাপে মদত দিয়ে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির অতীত ইতিহ্য, পরিচিতি-সুনামকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্সির পাশাপাশি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এরাজ্যের নামী কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই জায়গাগুলিতে চক্রান্তকারীরা ছাত্র আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য তৈরি করতে চাইছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হিন্দু হস্টেলের সংস্কার ও সেখানের থাকতে চেয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সমাবর্তনের অনেক আগেই আলোচনার মাধ্যমে তা মিটিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও রাজ্যের শিক্ষা দফতরের উদাসীনতায় তা আর সম্ভব হয়নি। ‘অর্গানাইজার’-এর প্রতিবেদনের দাবি, ঘোলা জলে মাছ ধরতে চায় এমন কিছু রাজনৈতিক কূটবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীদের ভুল বুঝিয়ে ফায়দা লুঠতে এই ধরনের আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে ও ভুল পথে চালিত করছে।
প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ, ছাত্র ছাত্রীদের এই আন্দোলন যে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ভালোভাবে নিচ্ছেন না নন্দনের প্রতীকি সমাবর্তনে তাও পরিষ্কার হয়ে গেছে। আরএসএস মুখপত্রের দাবি, সমাবর্তনে উপস্থিত প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী ও সাহা ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর ডক্টর বিকাশ সিনহা বলেছেন, তিনি নিশ্চিত হস্টেলের দাবিতে যেভাবে প্রেসিডেন্সির গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা তার পেছনে কোনও রাজনৈতিক শক্তির মদত আছে। অনেকটা একই সুর শোনা গেছে ভারতরত্ন সিএনআর রাওয়ের কথাতেও। তিনি জানিয়েছেন, তিনি নিজে প্রেসিডেন্সির একজন পৃষ্ঠপোষক। গোটা দেশের কাছে এটি একটি সম্মানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত অতীত ঐতিহ্য ভুলে বর্তমান পড়ুয়াদের মধ্যে যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা কাম্য নয়। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মদত, এমনকী মাওবাদী মদতের কথাও ঘুরিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

Comments are closed.