‘সাবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ অপ্রয়োজনীয় এবং প্ররোচণামূলক’, শেষমেশ বিজেপির সুর কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের গলায়

বিজেপি মন্ত্রী, সাংসদরা তো ছিলেনই, এবার সাবরীমালা ইস্যুতে তাঁদেরই সুর প্রকাশ্যে শীর্ষ কংগ্রেস নেতার গলায়।
বুধবার ভোরে সাবরীমালা মন্দিরের গর্ভগৃহে বিন্দু ও কনকদুর্গা নামে দুই মহিলার প্রবেশকে ‘অপ্রয়োজনীয় ও প্ররোচনামূলক’ বলে মন্তব্য করলেন কেরলের কংগ্রেস সাংসদ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর। সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায় সত্ত্বেও বিজেপি, আরএসএস এবং কংগ্রেসের তীব্র বিরোধিতা এবং আন্দোলনে ঋতুমতী মহিলারা সাবরীমালায় মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি বহুদিন। বুধবার ভোরে, দুই মহিলা কেরল পুলিশের নিরাপত্তায় আয়াপ্পা দর্শন করেন।
মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করা হয়েছে এই অভিযোগে বুধবার সকাল থেকে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আন্দোলন শুরু করেছে রাজ্যে। তাদের পাশে দাঁড়ায় কেরল কংগ্রেস নেতৃত্বও। বিঘ্নিত হয়েছে রাজ্যের মানুষের স্বাভাবিক জীবন। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং সাংসদ শশী থারুর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মন্তব্য করেন, সাবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ অপ্রয়োজনীয় এবং প্ররোচনামূলক। যদিও, নিজের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সাফাই দিয়ে বলেন, তাই বলে এই নয় যে কংগ্রেস দল মহিলাদের সমান অধিকারের দাবিকে অসম্মান করে। কিন্তু, যুগ যুগ ধরে চলে আসা সাবরীমালা মন্দিরের প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা করা ও ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করা উচিত। তাঁর অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে সম্মান করেও কেরল সরকারের উচিত ছিল, আরও ভালোভাবে সাবরীমালা ইস্যুকে নিয়ন্ত্রণ করা। এনিয়ে কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মন্তব্য করেন প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী।
প্রসঙ্গক্রমে, ২০১৬ সালে যখন সাবরীমালা ইস্যু আদালতে ওঠে, তখন মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকারের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন শশী থারুর। ২০১৮ সালে ২৮ শে সেপ্টেম্বর শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায়কেও সমর্থন করেছিলেন তিনি। মহিলাদের সমান অধিকার নিয়ে সরব, প্রগতিশীল শশী থারুরের হঠাৎ কেন অবস্থান বদল? সমালোচকরা বলছেন, কেরলে যখন বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্য কংগ্রেস সাবরীমালা ইস্যুতে ‘নীতিগত’ সমর্থন করছে, সেই সূত্র ধরেই ভোল বদল করেছেন কংগ্রেস নেতা। কারণ, কয়েক মাসের মধ্যেই আসছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে মানুষের একাংশের ভাবাবেগের সঙ্গে থাকতে চাইছেন তিনি।
শশী থারুর অবশ্য বলছেন, তিনি নিঃসন্দেহে মহিলাদের সমান অধিকারের পক্ষে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে কেরলের পরিবেশ দেখে তাঁর পর্যালোচনা, ব্যাপারটা নিছক সমান অধিকারের দাবি নয়, একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের বিশ্বাস এবং ভাবাবেগ জড়িত এর সঙ্গে। তাই সাবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ অপ্রয়োজনীয় বলেই তিনি মনে করেন।
তাঁর এই মন্তব্যের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শশী নিন্দায় সরব হন নেটিজেনরা। তাঁকে সমান অধিকারের নামে ‘অপ্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি’ বলে কটাক্ষ করছেন কেউ। আবার, কেউ কটাক্ষ হেনেছেন, ‘ডাবল স্টান্ডার্ড’ বলে।

Comments are closed.