কম্পিউটারের তথ্যের পর এবার সোশ্যাল মিডিয়ার মেসেজের ওপর নজরদারি চালাতে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ বাতিল করতে চায় কেন্দ্র

গত সপ্তাহেই যে কোনও ব্যক্তির কম্পিউটারের তথ্যের ওপর দেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে নজরদারি চালাতে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র, যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রবল বিতর্কের। কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল সবকটি রাজনৈতিক দল। এবার সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি চালাতে নয়া নীতি চালু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে মিথ্যে প্রচার এবং অনভিপ্রেত ঘটনা ঠেকাতে ব্যবহারকারীদের ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ বাতিল করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। তবে পরিষবা সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই কেন্দ্র এবিষয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গিয়েছে।
এক কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকের কথায়, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়ানো গুজবের জেরে অনেক অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে। গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। এই সব অপরাধমূলক কার্যকলাপ ঠেকাতে এবার ব্যবহারকারীদের মেসেজ ট্র্যাক করার কথা ভাবছে কেন্দ্র। যদিও এখনই কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা হয়নি। সবটাই আলোচনা সাপেক্ষ বলে জানান তিনি।
সূত্রের খবর, এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রের সঙ্গে গুগল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, অ্যামাজন, ইয়াহু, ট্যুইটার, শেয়ার চ্যাট, সেবি এবং ইন্টারনেট প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনা হয়ে গিয়েছে। নতুন বছরের ৭ জানুয়ারির মধ্যে কোম্পানিগুলিকে এসম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, সোশ্যাল সাইটে গুজব ছড়িয়ে যে সব অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে তা বন্ধ করতেই এই আইন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে কিছুদিন ধরে শিশু অপহরণের গুজব ছড়িয়েছিল। এর জেরে বেশ কিছু জায়গায় শুধুমাত্র সন্দেহের বশে একাধিক অপরিচিত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে গণপিটুনিতে। যদি কোম্পানিগুলি প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় যাতে হস্তক্ষেপ না হয় সে বিষয়টিও কেন্দ্র দেখবে বলে দাবি করেছে।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলি প্রস্তাবিত ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ বাতিল করতে রাজি নয় বলে জানা গিয়েছে। এতে তাদের স্বতন্ত্রতা থাকবে না এবং ব্যবহারকারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন বলে দাবি সংস্থাগুলির। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি অ্যাপে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয় যাতে ব্যবহারকারীদের মেসেজ গোপনীয় ও নিরাপদ থাকে। কিন্তু কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে নিলে ব্যবহারকারীদের মেসেজ তদন্তের স্বার্থে দেখা যাবে এবং যে কোনও মেসেজের প্রাপকের ‘সোর্স’ সহজে জানা যাবে।
গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নয়া নির্দেশিকা জারি হয়, যাতে যে কোনও ব্যক্তির মোবাইল ফোন, কম্পিউটারে নজরদারি চালাতে পারবে ১০ টি তদন্তকারী সংস্থা। এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার আগে শুধুমাত্র ই-মেল ও মোবাইল কল-এর মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানের ওপর নজরদারি চালানোর ক্ষমতা ছিল তদন্তকারী সংস্থাগুলির। কিন্তু এখন থেকে শুধু মোবাইল কল বা ই-মেল নয়, কম্পিউটারের যে কোনও তথ্য খতিয়ে দেখার ক্ষমতা দেওয়া হল এই তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে বাজেয়াপ্ত করা যাবে যে কোনও কম্পিউটার বা যন্ত্র। যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা এখন থেকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে তাঁর বা তাদের কম্পিউটারের তথ্য দেখাতে বাধ্য। অন্যথায় জরিমানা অথবা সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

Comments are closed.