বাতিল, পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের বর্জ্য থেকে মূল্যবান ধাতু তৈরি, সাফল্য ভারতীয় বিজ্ঞানীর

পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের দূষণ (ই-ওয়েস্ট) নিয়ন্ত্রণে নজিরবিহীন সাফল্য ভারতীয় বিজ্ঞানীর। কানপুর আইআইটির প্রাক্তনী মেটিরিয়াল সায়েন্টিস্ট বীনা সহজওয়ালা ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসে (unsw)। তিনি এই অস্ট্রেলিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাসটেনেবল মেটিরিয়ালস অ্যান্ড টেকনোলজির অধিকর্তা। পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপের বর্জ্য পদার্থ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান ধাতু তৈরি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষনা করে সম্প্রতি বড় সাফল্য পেয়েছেন ভারতীয় বিজ্ঞানী সহজওয়ালা।
সংবাদসংস্থা এএনআইকে সম্প্রতি বীনা সহজওয়ালা জানান, ই-ওয়েস্ট পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার জন্য মাইক্রো ফ্যাক্টরি তৈরি করা ছিল তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, প্রতিদিন বিশ্বে প্রচুর নতুন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে। যে পরিমানে এই ধরনের সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে, তার থেকেও বেশি পরিমানে বাতিল এবং পরিত্যক্ত হচ্ছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ। এই বিপুল পরিমানে জমতে থাকা ই-ওয়েস্ট নানা কারণেই স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ল্যাপটপ, কম্পিউটারের এই পরিত্যক্ত সার্কিট বোর্ড থেকে কপার, টিনসহ একাধিক মূল্যবান ধাতু তৈরি হবে তাঁদের মাইক্রো ফ্যাক্টরিতে। যার ফলে একদিকে যেমন দূনিয়াজুড়ে বিপুল পরিমানে জমতে থাকা ই-ওয়েস্টের দূষণ কমানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে, তা থেকে যে ধাতু তৈরি হবে অন্য শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারও করা যাবে।
মুম্বইয়ের বাসিন্দা বীনা সহজওয়ালা কানপুর আইআইটি থেকে ১৯৮৬ সালে মেটালার্জিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক করেন। এই মহুর্তে অস্ট্রেলিয়ার unsw’র বিজ্ঞানী তাঁর কর্মজীবনজুড়েই নানান বর্জ্য পদার্থকে কীভাবে ব্যবহার যোগ্য করে গড়ে তোলা যায় তার গবেষনা করছেন। একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সহজওয়ালার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্য ‘গ্রিন স্টিল’ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে বাতিল রাবার টায়ার থেকে কয়লা এবং কোক তৈরি করা হয়, যা ইস্পাত শিল্পে কাজে লাগে।
বীণা সহজওয়ালা জানিয়েছেন, ই-ওয়েস্টকে রিসাইকেল করে ধাতু তৈরির মাইক্রো ফ্যাকট্রি প্রজেক্ট গোটা বিশ্বেই বিশেষ করে বড় শহর থেকে দূরবর্তী শহর, ছোট দ্বীপ কিংবা ছোটখাট জায়গায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, ছোট শহর বা গ্রামে আজকাল প্রচুর পরিমানে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু সর্বত্র এই ই-ওয়েস্ট ফেলার মতো পরিকাঠামো নেই, যার ফলে দূষণ বাড়ছে। আবার তা বৈজ্ঞানিকভাবে নির্দিষ্ট জায়গায় রিসাইকেল করার জন্য অনেক দূরের কোথাও নিয়ে যেতে হচ্ছে, যা যথেষ্টই খরচসাপেক্ষ। তাই বাতিল এবং পরিত্যক্ত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার (ই-ওয়েস্ট) থেকে মাইক্রো ফ্যাক্টরিতে আবার ব্যহারযোগ্য ধাতু তৈরি করতে পারলে দূষণ যেমন নিয়ন্ত্রিত হবে, তেমনই কর্মসংস্থানও হবে। দীর্ঘদিন নানান বর্জ্য পদার্থ নিয়ে কাজ করা বীনা সহজওয়ালা সম্পর্কে সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে, ‘professor Veena Sahajwalla is passionate about rubbish.’

Leave A Reply

Your email address will not be published.