মমতার ব্রিগেডে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, বামেদের ব্রিগেডে সিপিএমের প্রধান বক্তা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটপন্থী ইয়েচুরি

১৯ শে জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশ থেকে বিজেপি বিরোধী দলগুলির ঐক্যের চেহারা তুলে ধরতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইচ ডি দেবেগৌডা, অখিলেশ যাদব, কুমারস্বামী, স্ট্যালিন, ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা, তেজস্বী যাদব, চন্দ্রবাবু নাইডু, শারদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কলকাতায় আসা নিশ্চিত করেছেন। কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ব্রিগেডে আসবেন বলে নিজেই জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। যদিও রাজ্য স্তরের কংগ্রেস নেতাদের অনেকেই চাইছিলেন না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা ব্রিগেডে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ আসুন, কিংবা হাইকমান্ড কাউকে পাঠাক। কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের রাজ্য নেতাদের বক্তব্য যে হাইকমান্ড খুব একটা গুরুত্ব দেয় না তা ১৯ তারিখ মল্লিকার্জুন খাড়গেকে পাঠানোর সিদ্ধান্তের মধ্যেই স্পষ্ট।
তৃণমূলের ব্রিগেডে কংগ্রেসের কেউ আসেন কিনা সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটও। কারণ, রাজ্যে কংগ্রেসকে যে কোনওভাবে তৃণমূলের থেকে আলাদা রাখতে চান সূর্যকান্ত মিশ্ররা। তার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বার্তাও ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেছে রাজ্য সিপিএম। গত রবিবারই প্রয়াত সিপিএম নেতা নিরুপম সেনের স্মরণসভায় সরাসরি কংগ্রেসকে জোট বার্তা দিয়েছেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এই জোট বার্তাকে অক্ষুন্ন রাখতেই এবার তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশের পর আগামী ৩ রা ফেব্রুয়ারি বামেদের ব্রিগেড সমাবেশে কংগ্রেস সম্পর্কে নরমপন্থী সীতারাম ইয়েচুরিকে মূল বক্তা করছে রাজ্য সিপিএম। সূত্রের খবর, বামেদের ব্রিগেডে এবার সিপিএমের প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের একটা বড় অংশ এখনও চাইছেন, ২০১৬ সালের পুনরাবৃত্তি করে লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে। একই জিনিস চাইছেন রাজ্য কংগ্রেসেরও সিপিএমপন্থী কয়েকজন নেতা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার তীব্র সমালোচনা করে জানিয়েছিল, বাংলা পার্টির এই সিদ্ধান্ত দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু তারপরও আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার রাস্তা খোলা রাখতে সম্প্রতি সিপিএমের একাধিক রাজ্য কমিটি মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। এমনকী ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের যে রাজ্য সম্মেলন হয়, তাতে পেশ করা রিপোর্টে সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সরাসরি উল্লেখ করেছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা এরাজ্যে বিজেপির ভোট কমাতে সাহায্য করেছে।
সূত্রের খবর, বামেদের ৩ রা ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশে ১৭ দলের নেতা উপস্থিত থাকবেন। সব দলের জন্যই অল্প অল্প করে সময় বরাদ্দ করা হচ্ছে। বড় শরিক হিসেবে সিপিএম পাবে অতিরিক্ত সময় এবং অতিরিক্ত বক্তা। সিপিএমের মূল বক্তা হিসেবে থাকবেন সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যেই লোকসভা ভোটের জন্য বিরোধী দলগুলির সম্পর্কের সমীকরণটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন কী হবে তাও অনেকটাই স্পষ্ট হবে ১৯ শে জানুয়ারির তৃণমূলের ব্রিগেডে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়নকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সিপিএম সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে। এখন সিপিএম নেতৃত্ব কৌতুহলী নজর রাখছেন, তৃণমূলের ব্রিগেডে কংগ্রেসের প্রতিনিধি কী বলেন তার দিকে। রাহুল বা সোনিয়া গান্ধী কেউ আসবেন না জেনে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন রাজ্য সিপিএমের জোটপন্থী নেতারা। আর সেই কারণেই কংগ্রেসকে বার্তা দিতে ব্রিগেডে মূল বক্তা হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে সীতারাম ইয়েচুরির নাম।

Comments are closed.