দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখে শনিবার ব্রিগেড থেকে অবিজেপি-অকংগ্রেস সরকার গড়ার ডাক দেবেন মমতা

১৯ শে জানুয়ারি ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশের দু’দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি ভবিষ্যদবানী করেছেন। এক, ১২৫ আসন পেরোবে না বিজেপি এবং দুই, কংগ্রেস নয়, আঞ্চলিক দলগুলির হাতেই থাকবে কেন্দ্রীয় সরকার গড়ার চাবিকাঠি।
কেন, কোন হিসেবে এই ভবিষ্যদবানী করলেন তৃণমূল নেত্রী, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণায় আরও যেটা স্পষ্ট তা হল, দেশে তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়ার লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখেই ব্রিগেডের মঞ্চে শনিবার দুপুরে বক্তৃতা করতে উঠবেন তিনি। কারণ, লোকসভা ভোট যত এগোচ্ছে ততই আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক বিন্যাসের সমীকরণ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালোই জানেন, এই মুহূর্তে রাজ্যওয়াড়ি যা পরিস্থিতি তাতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের পরই সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
২০১৪ সালে ২৮২ টি আসন পেয়ে দেশে সরকার গঠন করা বিজেপির একচ্ছত্র শক্তি মূলত পাঁচটি রাজ্যে। উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, গুজরাত এবং ছত্তিশগড়। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তর প্রদেশে বিজেপি ২০১৪ সালে ৮০ টির মধ্যে ৭৩ টি, গুজরাতে ২৬ এর মধ্যে ২৬ টি, মধ্য প্রদেশে ২৯ এর মধ্যে ২৭ টি , রাজস্থানে ২৫ এর মধ্যে ২৫ টি এবং ছত্তিশগড়ে ১১ টির মধ্যে ১০ টি আসন পেয়েছিল। এই রাজ্যগুলিতে ১৭১ টি র মধ্যে ১৬১ টি আসন জিতেছিল বিজেপি। এর বাইরে বড় রাজ্যের মধ্যে মহারাষ্ট্রে বিজেপি ৪৮ টির মধ্যে পেয়েছিল ২৩ টি আসন।
উত্তর প্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতী জোটের পর সেখানে বিজেপির আসন গতবারের অর্ধেক হয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। পাশাপাশি, হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্য রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিশড়ে সম্প্রতি বিধানসভা ভোট ধাক্কা খাওয়ার পর, সেখানেও বিজেপির আসন অর্ধেকের কম হতে পারে। গুজরাতে ২০১৭ র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সরকার গড়লেও জোর লড়াই দিয়েছিল কংগ্রেস। যদিও এই চার রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা কত হবে তা পুরোটাই নির্ভর করছে কংগ্রেসের পারফর্মেন্সের ওপর। কারণ, এখানে কংগ্রেসই বিজেপির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী। বলা যেতে পারে, দেশের মধ্যে একমাত্র দ্বিমুখী লড়াই এই চার রাজ্যে। ২০১৪ সালে এই চার রাজ্যে বিজেপির যে ৯৫ শতাংশের ওপর সাফল্য তার পেছনেই রয়েছে কংগ্রেসের গোটা দেশে ৪৪ টি আসনে নেমে যাওয়ার রহস্য। তৃণমূল নেত্রীর বিশ্বাস, এই চার রাজ্যে মোট ৯১ টি আসনের মধ্যে এবার বিজেপি বা কংগ্রেস কারওরই আসন সংখ্যা ৫০ পেরোনো কঠিন। এর বাইরে একমাত্র মহারাষ্ট্রে বিজেপির ভালো সংখ্যক আসন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেখানেও শিবসেনার সঙ্গে এই মুহূর্তে তাদের যা সম্পর্ক তাতে মারাঠা রাজ্যেও ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি।
আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা। পশ্চিমবঙ্গে নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেস, উত্তর প্রদেশে সপা-বিএসপি, বিহারে লালু পুত্র তেজস্বী, দিল্লিতে কেজরিওয়াল, অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু, তামিলনাড়ুতে স্ট্যালিন, কর্ণাটকে দেবেগৌড়া-কুমারস্বামী, তেলেঙ্গানায় কে চন্দ্রশেখর রাও, কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা এবং কেরলে সিপিএমের সাফল্যের অঙ্কের ওপর দাঁড়িয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই অঙ্কের ওপর ভিত্তি করেই দেশের বিজেপি বিরোধী দলগুলির মহা-সমাবেশ ডেকেছেন ব্রিগেডে। তৃণমূলের অন্দরে এই আলোচনা আজ আর গোপন নেই যে, বিজেপি-কংগ্রেস মিলে ২২০-২২৫ আসনে আটকে যাবে। যা বড় জোর ২৪০ হতে পারে। এরপর বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এবং নির্দলের হাতে থাকবে প্রায় ৩০০ আসন। তৃণমূল নেত্রীর হিসেব, এর ওপর ভিত্তি করেই তাঁর ফেডেরাল ফ্রন্ট সরকার গড়ার জায়গায় থাকবে ২০১৯ লোকসভার পর।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক এবং বিজেপি-কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে জাতীয় দলগুলির যা রাজনৈতিক বিন্যাস, তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের তৃতীয় বৃহত্তম দল হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত। এখন লোকসভায় তৃণমূলের আসন সংখ্যা ৩৪। পশ্চিমবঙ্গের এই মুহূর্তে যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে তা কমার কোনও সম্ভাবনা তো নেইই, বরং তা বাড়তে বাড়তে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশকিল। অন্যদিকে, অন্যান্য রাজ্যে যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, অখিলেশ, মায়াবতী, লালু, স্ট্যালিন, চন্দ্রবাবু, চন্দ্রশেখর রাও, কুমারস্বামী, তেজস্বী, নবীন পট্টনায়েক বা কেজরিওয়াল, কারও একার পক্ষেই ৩২-৩৪ টি আসন পর্যন্ত পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব। এই হিসেবের ওপর দাঁড়িয়েই শনিবারের ব্রিগেড মঞ্চ থেকে অবিজেপি-অকংগ্রেস সরকার গড়ার ডাক দেবেন তৃণমূল নেত্রী। আর তাঁর হিসেব মতো দেশের সরকার গড়ার নিয়ন্ত্রক শক্তি যদি হয়ে ওঠে ফেডারেল ফ্রন্ট, তবে তার চাবি থাকবে তৃণমূলের হাতেই।

Comments are closed.