চার্লি চ্যাপলিনকে সাক্ষী রেখে ঐতিহাসিক মেট্রোপোল হ্যানয়ে বৈঠক ট্রাম্প ও কিম জং উনের

ভিয়েতনামের রাজধানীর মেট্রোপোল হ্যানয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার হাইভোল্টেজ সাক্ষাতে থাকবে চার্লির ছাপও। ১৯৩৬ সালে মধুচন্দ্রিমা কাটাতে এই হোটেলেই থেকেছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। তারপর থেকে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব মেট্রোপোল হ্যানয়ে রাত কাটিয়েছেন। তালিকায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। সম্প্রতি ভিয়েতনাম সফরের সময় সপার্ষদ ট্রাম্প রাত্রীবাস করেছেন এই হোটেলেই। সেখানেই তাঁর সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠকে বসবেন উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উন। সিঙ্গাপুর ডিক্লিয়ারেশনের পর ফের একবার মুখোমুখি ট্রাম্প ও কিম জং উন।

কী নিয়ে আলোচনা?

গত বছর জুন মাসে সিঙ্গাপুরে দুই রাষ্ট্রনেতা প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেই বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল পরমাণু অস্ত্র। এবারের সাক্ষাতের মূল বিষয়ও অপরিবর্তিত থাকছে। আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব চায় উত্তর কোরিয়া তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ রাখুক। যাকে পদ্ধতিগত ভাবে বলে ‘ডিনিউক্লিয়ারাইজেশন’। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার দাবি, তাদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে রাখা হয়েছে তা প্রত্যাহার না করা হলে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা হবে না। নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বের প্রায় কোনও দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্কে যেতে পারে না কিম জং উনের উত্তর কোরিয়া। গোটা বিশ্বে কার্যত একঘরে তারা।

দ্য সিঙ্গাপুর ডিক্লারেশন

গত বছর জুন মাসে সিঙ্গাপুরে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের মূল এজেন্ডা ছিল ‘ডিনিউক্লিয়ারাইজেশন’। যদিও সেই বৈঠকে কিম ও ট্রাম্প কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। বৈঠক শেষে হয়নি কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। যদিও ‘দ্য সিঙ্গাপুর ডিক্লারেশন’কে পুরোপুরি ব্যর্থ বলতে নারাজ বিশ্বের বিভিন্ন মহল। সেই বৈঠকের অন্দরের খবর জানা না গেলেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনা আশার সঞ্চার করেছিল। তারপর উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু পরীক্ষাগার ধ্বংস করে। যদিও একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের পরীক্ষাগার ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে সেই দেশের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সদিচ্ছা প্রকাশ পায় না বলেই অভিমত সকলের। এই প্রেক্ষিতেই এবার হ্যানয়ে ফের মুখোমুখি ট্রাম্প ও কিম জং উন। এই প্রেক্ষিতে অবশ্য সামনে আসছে উত্তর কোরিয়ার বাধ্যবাধকতার কথা। এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব ধরে রাখতে উত্তর কোরিয়া আমেরিকার সমস্ত দাবি যে কখনওই মেনে নেবে না তা স্পষ্ট হোয়াইট হাউসের কাছেও। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্পের মন্তব্যও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়া যে নতুন করে কোনও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেনি, এটাই অনেক।

উত্তর কোরিয়ার পরমাণু সম্ভার নিয়ে কেন আপত্তি বিশ্বের?

বিশ্বে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে পরমাণু বোমা। বিশেষ কতগুলি ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে নতুন করে পৃথিবীতে আর কোনও দেশকে পরমাণু শক্তিধর হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয় না। এই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু শক্তিধর হয়ে ওঠার খবরে প্রমাদ গুনতে থাকে বিশ্ব। সামরিক কাজে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না তেমনও কোনও অঙ্গিকার করেনি কিম জং উনের দেশও। সেক্ষেত্রে মার্কিন হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ মার্কিন হস্তক্ষেপের ফলে উত্তর কোরিয়ায় সরকারের পতন ঘটলে যে অরাজকতার সৃষ্টি হবে তাতে পরমাণু অস্ত্রসম্ভার ভুল হাতে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না আমেরিকা। পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র কিংবা তা তৈরির ফর্মুলা বেহাত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। যুদ্ধোত্তর চুক্তি মতো, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে এখনও মোতায়েন হাজার হাজার মার্কিন সেনা। উত্তর কোরিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উদ্বেগ বাড়াবে বলে আশঙ্কা। এই প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়ার উপর চাপের রাজনীতিতে যে হিতে বিপরীত হতে পারে তা বুঝতে পেরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত চলে কোরিয়ান যুদ্ধ। কিন্তু একটি অংশের অভিমত সেই যুদ্ধ এখনও চলছে। কারণ হিসেবে তারা তুলে ধরছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা কোনও শান্তি চুক্তির মধ্যে দিয়ে শেষ হয়নি বরং তাতে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি চলছে। এই প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট ভিয়েতনামের ঐতিহাসিক মেট্রোপোল হ্যানয় হোটেলে দুই রাষ্ট্রনেতার দুদিনের সাক্ষাৎ কি প্রকৃত অর্থেই বিশ্বশান্তির প্রতীক হয়ে উঠতে পারবে? এখন দেখার সেটাই।

Comments are closed.