তুলসিরাম প্রজাপতি ভুয়ো এনকাউন্টারে মুখ্য ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন অমিত শাহ, আদালতে দাবি তদন্তকারী অফিসারের
২০০৬ সালের তুলসিরাম প্রজাপতি ভুয়ো এনকাউন্টার মামলায় নয়া মোড়। বুধবার সিবিআই-এর স্পেশাল আদালতে সাক্ষী দিতে এসে মামলার সঙ্গে যুক্ত সিবিআই-এর এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, এই এনকাউন্টারের অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন বর্তমান বিজেপি সভাপতি অমিত সাহ। সন্দীপ তামগাদগে নামে এই সিবিআই অফিসার ২০০৬ সালের ওই ঘটনার মুখ্য তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি এই তদন্তের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে একটি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেন। তার আগে ওই ঘটনার তদন্ত করেছিলেন অমিতাভ ঠাকুর। তাঁর পেশ করা চার্জশিটেও নাম ছিল অমিত শাহর।
সূত্রের খবর, আদালতে সন্দীপ জানিয়েছেন, আইপিএস অফিসার ডিজি বাঞ্জারা, দীনেশ এম এন, রাজকুমার পান্ডিয়ার সঙ্গে এই ভুয়ো এনকাউন্টারের অন্যতম মুখ্য ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন অমিত শাহ। নাগাল্যান্ডের ২০০১ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসার আদালতে আরও জানিয়েছেন, সেই সময় দুষ্কৃতী-রাজনীতিবিদ ও পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে যে গোপন আঁতাত তৈরি হয়েছিল, অমিত শাহ ছিলেন তার অন্যতম অংশীদার এবং তাঁদের ওই গোপন আঁতাতের ফলস্বরূপ চক্রান্ত করে খুন করা হয় সোহরাবুদ্দিন শেখ, তাঁর স্ত্রী কৌশর বাই ও তুলসীরাম প্রজাপতিকে।
আদালতে এই তদন্তকারী সিবিআই অফিসার আরও জানান, ওই দুষ্কৃতী, রাজনীতিক ও পুলিশের গোপন আঁতাতের একটি অংশ ছিল তুলসীরাম প্রজাপতি, সোহরাবুদ্দিন শেখ, আজাম খান প্রমুখ। তাঁরা পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরে নিজেদের রাজনৈতিক প্রভু ও ক্ষমতাবান নেতাদের আদেশ অমান্য করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তুলসীরাম প্রজাপতি, সোহরাবুদ্দিন শেখরা। তাই সব ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁদের খুনের চক্রান্ত করা হয় নয়া কায়দায়। যাবতীয় পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৫ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে।
গোটা ঘটনায় মোট ৩৫ জনের নাম থাকলেও, সিবিআই আদালতে যথাযথ প্রমাণ দিতে না পারায় অমিত শাহসহ মূল অভিযুক্তরা, যাঁর মধ্যে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকও আছেন, তাঁরা এই মামলা থেকে ছাড় পেয়েছেন। এখন বিচার চলছে নিচুতলার ২১ জন পুলিশকর্মী ও ১ গেস্ট হাউস মালিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এই গেস্ট হাউসেই খুনের আগে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছিল সোহরাবুদ্দিনের স্ত্রী কৌশর বাইকে। তবে মনে করা হচ্ছে, ঘটনার মূল তদন্তকারী তৎকালীন অফিসার সন্দীপ তামগাদগের এই বয়ান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ও তা চাপে ফেলতে পারে অমিত শাহকে। কারণ এর তদন্তের সঙ্গে জড়িত অনেক সিবিআই আধিকারিক মামলার শুনানির সময় চাপে পড়ে নিজেদের বয়ান পাল্টেছেন বা সাক্ষীদের চিনতে অস্বীকার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিরোধীদের তরফে। যোগ্য প্রমাণের অভাবে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই মামলা থেকে অমিত শাহকে ছাড় দেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেসময় সিবিআই-এর তরফে অতিরিক্ত কোনও আবেদনও জানান হয়নি। সেদিক থেকে সন্দীপের এবারের বয়ান বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে কোহিমায় পোস্টিংয়ে আছেন এই সিবিআই অফিসার। গুজরাতের আরএক বিতর্কিত ইসরাত জাহান ভুয়ো সংঘর্ষ মামলার তদন্তেও যুক্ত ছিলেন সন্দীপ। সেখানেও বিজেপির প্রথম সারির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের তির উঠেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার এক সপ্তাহ আগে সন্দীপকে ওই তদন্ত থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সিবিআই-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালের ২৩ নভেম্বর একই বাসে সফর করছিলেন তুলসীরাম প্রজাপতি, সোহরাবুদ্দিন শেখ ও কৌশর বাই। সেখান থেকে সোহরাবুদ্দিন ও কৌশর বাইকে অপহরণ করে পুলিশ। ২৬ নভেম্বর পুলিশি এনকাউন্টারে মারা যান সোহরাবুদ্দিন শেখ। কৌশর বাই এর দেহ উদ্ধার না হলেও আনুষাঙ্গিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকেও খুন করা হয়েছে বলে জানায় সিবিআই। তুলসীরাম প্রজাপতিকে পুলিশ গ্রেফতার করে, তাঁকে উদয়পুর জেলে পাঠানো হয়। ২০০৬ সালে এক এনকাউন্টারে তাঁরও মৃত্যু হয়।
Comments are closed.