বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকে জইশ জঙ্গির মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ অস্ট্রেলিয় গবেষণা সংস্থার, কী আছে রিপোর্টে?
পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার জবাব দিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে এয়ার স্ট্রাইক চালায় ভারত। মোদী সরকারের আমলে এই দ্বিতীয় ‘সার্জিকাল স্ট্রাইকে’ দাবি করা হয়, জৈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় নেতা সহ প্রায় ৩০০ জঙ্গি মারা গিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পাশাপাশি একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যম বলছে, এয়ার স্ট্রাইকে কোনও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। স্বভাবতই কৌতূহল তৈরি হয়েছে, ঠিক কতজন জঙ্গিকে মারতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কৌশল এবং বিশ্লেষণকারী সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (ASPI) এর মুখপত্র ‘দ্য স্ট্র্যাটেজিস্ট’-এ এই ‘এয়ার স্ট্রাইক’ নিয়ে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে।
তাদের ‘স্ট্র্যাটেজিস্ট স্পেশাল রিপোর্টে’ গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারির এয়ার স্ট্রাইকে জঙ্গি মৃত্যুর কোনও খবর নেই। ASPI এর গবেষক তথা ‘দ্য স্ট্র্যাটেজিস্ট’ পত্রিকার লেখক নাথান রাসের, গত ১ লা মার্চ লিখছেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতা এক নতুন মাত্রা পায়। সন্ত্রাসবাদের জবাব দিতে ভারতের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানে ঘাঁটি তৈরি করা জৈশ-ই-মহম্মদের শিবির ধ্বংস। ভারত দাবি করেছে পাকিস্তানের জাবা শহরের কাছাকাছি এলাকায় ২৬ শে ফেব্রুয়ারি ভোররাতের এয়ার স্ট্রাইকে কয়েকশো জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।’
কিন্তু জঙ্গি মৃত্যুর প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (ASPI) সন্দেহ প্রকাশ করছে। এয়ার স্ট্রাইকের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ শে ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত ছবি ও রিপোর্টের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয় সংস্থার বিশ্লেষণ, জঙ্গি মৃত্যুর কোনও প্রমাণ নেই।
আর ভারতীয় বায়ুসেনার এই অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে দু’দেশের মধ্যেই যে তথ্যের সত্যতা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন নাথান রাসের। তিনি লিখেছেন, দু’দেশের সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিন্নতা, গুজব ইত্যাদির ঘনঘটার মধ্যে সত্যিটা যে কী, তা বোঝা বেশ কঠিন।
তবে স্যাটেলাইট ইমেজারির ওপর ভিত্তি করে, ভারত যে ‘বিশাল সংখ্যক জঙ্গি মৃত্যুর’ দাবি করছে তাকে প্রাথমিকভাবে সত্যি নয় বলেই মনে করছেন নাথান রসের।
একদিকে ভারত দাবি করছে বায়ুসেনার অভিযানে পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে, অন্যদিকে এয়ার স্ট্রাইকের পরের দিন কোনও লক্ষণীয় ক্ষতি হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছিল পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক। এয়ার স্ট্রাইকের এই ‘রহস্য’ নিয়ে নাথান রাসের অনেকগুলি সম্ভাবনার কথা বলছেন। তাঁর প্রথম অভিমত, আন্তর্জাতিক সীমা পেরিয়ে প্রায় ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে (ভারতের দাবি মতো) এয়ার স্ট্রাইক করে নিজেদের সামরিক ক্ষমতা জাহির করতে চেয়েছে ভারত। কিংবা এও হতে পারে কোনও ভুলের কারণে ‘টার্গেট’ ফসকেছে ভারতীয় বায়ুসেনা, মত নাথান রাসের-এর।
রাসের লিখেছেন, পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র জেনারেল আসিফ গফুর প্রথম এয়ার স্ট্রাইকের খবর জানিয়েছিলেন ট্যুইট করে। পরে ভারত জানায় পাকিস্তানের তিনটি অঞ্চলে এয়ার স্ট্রাইক করা হয়েছে। যদিও অন্য দুই জায়গায় এয়ার স্ট্রাইকের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাসের-এর অভিমত, হতে পারে পাকিস্তান কেবলমাত্র ‘ব্যর্থ’ হওয়া এয়ার স্ট্রাইকের সত্যতাটুকুই স্বীকার করেছে। যদিও, বিভিন্ন ছবি ও রিপোর্টে এই সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন এই ASPI এর গবেষক।
তাঁর মতে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায়, পুলওয়ামার ঘটনা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে। তাই দু’দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হতে পারে জেনেও, অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী এই প্রত্যুত্তর দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানকে।
Comments are closed.