পর্যটন দফতরের উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, ধ্রুপদী সুরে মজলেন শ্রোতা ও পর্যটকরা

কেবল মন্দির দর্শন নয়, পর্যটক ও সঙ্গীতপ্রেমীদের বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত রস আস্বাদন করাতে রাজ্যের পর্যটন দফতরের উদ্যোগে হল তিন দিনের বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি, তিনদিন জুড়ে চলা বাঁকুড়ায় এই ‘বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’-এ ছিলেন নাম করা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞরা।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম ঘরানা বিষ্ণুপুর। প্রাচীন কাল থেকেই বিষ্ণুপুর ঘরনার শিল্পীরা তাঁদের সুরের মূর্ছনায় বারেবারেই মন জয় করেছেন শ্রোতা ও দর্শকদের। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতিতে এবার বহু অনুষ্ঠান মুলতুবি ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যাল হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট ধন্দ ছিল। তবে শেষপর্যন্ত বিষ্ণুপুরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হতে দেখে খুশি সঙ্গীতপ্রেমীরা।

গত ৮ জানুয়ারি, শুক্রবার বিকেলে জোড়শ্রেণির মন্দির প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করে উৎসবের সুর বেঁধে দেন বিষ্ণুপুর রামশরণ মিউজিক কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকেরা। ১০ জানুয়ারি, রবিবার পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর বসে। বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যালের প্রথম দিনের আকর্ষণ ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী জগন্নাথ দাশগুপ্ত, সন্দীপন সমাজপতি ও গীটারে ছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুজিত গাঙ্গুলি, অসিত রায়, ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি, তবলা বাদক ছিলেন তন্ময় বসু ও ইন্দ্রনীল মল্লিক। অনুষ্ঠানের শেষ দিন অর্থাৎ, ১১ জানুয়ারি, রবিবার ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী সুভাষ কর্মকার, বামাপদ চক্রবর্তী, সেবক চট্টোপাধ্যায়, সৌমি মজুমদার ও সন্তুরবাদক তরুণ ভট্টাচার্য।

করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হস্তশিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে স্বাস্থ্য-বিধি মেনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে বিভিন্ন রকমের মেলা। এই প্রেক্ষিতে বিষ্ণুপুরে ‘বাংলা মোদের গর্ব’ ও ‘বিষ্ণুপুর মেলা’ শেষ হয়েছে ডিসেম্বরেই। তারপর হল বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। পর্যটকদের টানার পাশাপাশি হস্তশিল্পীদের বিক্রিবাটা বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ নেয় পর্যটন দফতর। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্ত জানান, প্রতিদিন স্থানীয় ও বাইরের শিল্পীরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন এই ফেস্টিভ্যালে। ছিল হস্তশিল্পের ২০টি স্টল। বালুচরি, স্বর্ণচরি ছাড়াও, থাকছে লন্ঠন, শঙ্খ, পোড়ামাটির সামগ্রী থেকে ডোকরা শিল্প। এ ছাড়া, পোড়ামাটির হাটের হস্তশিল্পীরা তিন দিন তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন জোড়শ্রেণির মন্দির প্রাঙ্গণে। বিষ্ণুপুর সঙ্গীত ঘরানার বিকাশে রাজ্যে সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন শিল্পীরা।

একদিকে পোড়া মাটির হাট, অন্যদিকে শীতের আবহে ধ্রুপদী সুরের মায়াজাল, সব মিলিয়ে শীতের কয়দিন জমজমাট ছিল মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর।

Comments are closed.