মুখ্যমন্ত্রী: কে, কেন পাঠিয়েছে জানি! রাজ্যপালকে ফের কড়া বার্তা মমতার

সংবিধান দিবস পালনের অনুষ্ঠানেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং মুখ্যমন্ত্রীর মমতা ব্যানার্জির সংঘাত একেবারে তুঙ্গে উঠে গেল। মঙ্গলবার বিধানসভায় ওই অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা হল বটে, কিন্তু কথা হল না। হল না দু’জনের মধ্যে সৌজন্য বিনিময়ও। বরং ভাষণ দিতে গিয়ে একে অন্যকে খোঁচা দিলেন তীব্র ভাষায়।
মমতা তাঁর ভাষণে বলেন, অনেক রাজ্যপালের সঙ্গে কাজ করেছি। কারও সঙ্গে এই রকম ঝগড়া হয়নি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? এটা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। এরপরেই রাজ্যপালকে ইঙ্গিত করে আরও শানিত ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘আপনাকে (ধনকড়) কে কেন পাঠিয়েছেন, সব জানি।
এর আগে অবশ্য তাঁর ‘সাংবিধানিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে’ বলে প্রথমে তরজা শুরু করেন রাজ্যপালই। তিনি বলেন, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের পদমর্যাদা লঘু করা হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় তা স্পষ্ট। এই ধরনের ঘটনা বেনজির। আমি চাই, বিধানসভায় আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্য এ বিষয়ে আত্মানুসন্ধান করুন। রাজ্যপাল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অল্প দিনের নোটিসে বিধানসভায় সংবিধান দিবস উদযাপনের আমন্ত্রণ পেয়েও তিনি তা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এক মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য সদস্যকে রাজভবনে এই দিবস পালনের অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এরপর তৃণমূল বিধায়কদের মুখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনতে শুনতে বিধানসভা ছাড়েন ধনকড়। তবে যাওয়ার আগে বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জিকে বলে যান, খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বিধানসভার অনুষ্ঠান থেকেই রাজ্যপাল রাজভবনের অনুষ্ঠানে চলে যান। সেখানে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী তো দুরের কথা, রাজ্যের কোনও মন্ত্রী বা শাসক দলের কোনও বিধায়ক ছিলেন না। বিরোধী বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি বিধায়কেরা সেখানে হাজির ছিলেন। সেখানেও রাজ্যপাল একই অভিযোগ করেন যে, তাঁকে জিজ্ঞাসা না করেই বিধানসভার অনুষ্ঠান ঠিক হয়েছিল। শুধু অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
রাজভবনের অনুষ্ঠান যখন চলছে, তখন বিধানসভায় ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর খোঁচা, আমাকে নেমন্তন্ন করেছেন তো এত বার প্রকাশ্যে বলার কী আছে? সকালে ট্যুইট করে কেন বলছেন! আমি তো তিন বার চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, বিধানসভা চলবে। কোনও কাজে আটকে যেতেই পারি। আমি তো বিশেষ বিশেষ দিনে রাজভবনে যাই। মমতার প্রশ্ন, রাজ্যপাল কি সত্যিই চেয়েছিলেন যে তিনি রাজভবনে যান? নাকি শুধু সবাইকে জানাতে চেয়েছেন যে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?
বিধানসভায় ধনকড়ের বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গ। উপত্যকা থেকে বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেন ধনকড়। স্মরণ করেন বি আর আম্বেডকর, সর্দার বল্লভভাই পটেল ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে। যা নিয়ে পরে রাজ্যপালকে বিঁধে মমতা বলেন, উনি ভুলে গেলেন, এটা বাংলা না কাশ্মীর। বাংলার কথা না বলে কাশ্মীরের কথাই বেশি বলে গেলেন।
জেলায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রাজ্য তাঁকে হেলিকপ্টার দেয়নি বলে ক্ষোভ  প্রকাশ করেছিলেন ধনকড়। সেই প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন মমতা। বলেন, জরুরি প্রয়োজনে আমাদের হেলিকপ্টার নিতে হয়। হেলিকপ্টার ফাঁকা না থাকলে রাজ্যপাল তা কী ভাবে পাবেন?
রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের তিক্ততা কোন পর্যায়ে গিয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীও এমন ব্যবহার করেন না! দেখা হলে হেসে কথা বলেন।

Comments are closed.