শরদের দাবি, তিনি কিছুই জানতেন না, মহারাষ্ট্রে মহা-নাটক, সরকার গড়ল বিজেপি, উপমুখ্যমন্ত্রী এনসিপির অজিত পাওয়ার

শনিবার সকালে মহারাষ্ট্রের মানুষ ঘুম থেকে উঠে জানতে পারল, ভোর ৫ টা ৪৭ মিনিটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে দেওয়া হচ্ছে বলে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তার ঘন্টা তিনেকের মধ্যে সকাল ৮ টা ১০ মিনিটে রাজভবনে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস। আর উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত।
মহারাষ্ট্রে এই নাটকীয় পট পরিবর্তনের ব্যাপারে শিবসেনা এবং কংগ্রেস নেতারা বিন্দুবিসর্গ জানতেন না। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঠিক ছিল এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়ছে শিবসেনা এবং মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে। রাত গড়াতেই খেলা যে এভাবে পাল্টে যাবে তা ছিল ধারণার বাইরে।
শরদ পাওয়ারের দাবি, ভাইপো অজিতের তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন। আর অপমানিত, বিস্মিত শিবসেনা প্রধানের প্রতিক্রিয়া, শরদ পাওয়ারদের এই পিছন থেকে ছুরি মারা মনে রাখবে তামাম মহারাষ্ট্র। একই সঙ্গে এনসিপির এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কংগ্রেসও।
এনসিপি, কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে যখন শিবসেনা সরকার গড়ার প্রক্রিয়া পাকা করে ফেলছিল তখনও বিজেপিন নিতিন গড়করিরা ঘোষণা করেছেন, সরকার গড়বেন তাঁরাই। আর মহারাষ্ট্রের মুখমন্ত্রীর কুর্সির আরও একবার দখল নেবেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস। কিন্তু বিজেপি-এনসিপির এই গোপন আঁতাতের কথা টের পায়নি কেউই। নিঃশব্দে শেষ চাল খেলল বিজেপি, ধরাশায়ী শিবসেনা।
দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ফড়নবিস জানালেন, শিবসেনা জনাদেশ মানেনি, তবে এনসিপি ও অজিত পাওয়ারকে ধন্যবাদ তাদের সমর্থনের জন্য। অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেও ২৯ নভেম্বরের মধ্যে দেবেন্দ্র ফড়বিস সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে নেমেছে বিজেপি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। ওই মহলের মতে, শুক্রবার মধ্যরাতে নিঃস্তব্ধতা ও গোপনীয়তার মধ্যেই অনেক অনৈতিক ও অশুভ খেলা ঘটে গিয়েছে মহারাষ্ট্রে।
শরদ পাওয়ার এখনও দাবি করছেন, দলের নয়, ভাইপো অজিত নিজের সিদ্ধান্তে বিজেপিকে সমর্থন করেছেন।
উদ্ধব ঠাকরেকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, কোনও সাচ্চা এনসিপি নেতা কখনও বিজেপির সঙ্গ দেবেন না। এই ঘটনা নিয়ে মহারাষ্ট্রে দিনভর নানা চর্চা চলে। তবে রাজনৈতিক মহলে দাবি, গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে শরদ পাওয়ারের বৈঠকে এই ঠিক হয়ে গিয়েছিল তাঁরা বিজেপিকেই সমর্থন করবে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর করেছে, তাঁকে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি করা হবে, মোদীর কাছ থেকে এই আশ্বাস পেয়েই পাওয়ার খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তারপর এক সপ্তাহ ধরে শিবসেনা, কংগ্রেসের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও নাটক ছিল। শরদের দাবি অবশ্য বিশ্বাস করছেন শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত। তাঁর কথায়, আমি নিশ্চিত অজিত পাওয়ারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে শরদ পাওয়ারের কোনও যোগ নেই। কিন্তু অজিত যা করলেন তা ছত্রপতি শিবাজি থেকে তামাম মহারাষ্ট্র কখনও ক্ষমা করবে না।
উপমুখ্যমন্ত্রী হয়ে অজিতের প্রতিক্রিয়া কী? সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি তিনি বলেন, ভোটের ফল প্রকাশ থেকে এতদিন পর্যন্ত কেউই সরকার গড়তে পারেনি। কৃষক সমস্যা সহ মহারাষ্ট্রের মানুষ প্রচুর অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই আমরা স্থিতিশীল সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর কংগ্রেসের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, তারাও বিস্মিত। সনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ আহমেদ প্যাটেল বলেন, রাতারাতি অবৈধ ও অশুভ রণকৌশল সাজিয়ে সরকার গড়া হল। আর এত সবের মধ্যে শিবসেনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হল বলে মনে করা হচ্ছে। এনসিপিকে খুশি করতে গিয়ে এনডিএ-এর সঙ্গে ত্রিশ বছরের পুরনো জোট ভেঙেছে তারা। এদিকে সরকার গড়াও হল না। শিবসেনার একূল-ওকূল, দুই কূলই গেল।

Comments are closed.