কর্মীদের দাবি দাওয়া নিয়ে সোচ্চার, ৪ জনকে ছাঁটাই করল গুগল, প্রতিবেদন নিউইয়র্ক টাইমসে

তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদের অধিকার নিয়ে সরব হওয়ার অভিযোগে কগনিজেন্টের বেঙ্গালুরু অফিস থেকে সম্প্রতি চাকরি গিয়েছে এলভারাসন রাজার। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, পারফর্মেন্সের কারণেই চাকরি গিয়েছে এলভারাসনের। এবার একইভাবে সুদূর আমেরিকায় গুগল ছাঁটাই করল ৪ জনকে। নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, গুগল কর্মীদের অধিকার এবং দাবি দাওয়া নিয়ে নিয়ম করে সরব হতেন এই ৪ জন। এক্ষেত্রেও গুগলের তরফে জানানো হয়েছে বারবার তথ্য নিরাপত্তা নীতি লঙ্ঘনের কারণেই চাকরি গিয়েছে তাদের।
সোমবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমস জানাচ্ছে, এই ছাঁটাইয়ের ফলে গুগল কর্তৃপক্ষ এবং তার কর্মীদের মধ্যে ক্রমেই অবনতি হওয়া সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগলের ভূমিকা নিয়ে কর্মীদের সরব অংশ বারবার মুখ খুলেছেন। এছাড়া ঠিকা বা অস্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে সংস্থার ব্যবহার নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। পাশাপাশি আমেরিকার ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট, ফেডেরাল বর্ডার এজেন্সি এবং চিন সরকারের সঙ্গে গুগলের কাজ নিয়েও অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছিলেন সংস্থার কর্মীদের একাংশ। এই সবেরই ফলশ্রুতি ৪ জনের চাকরি যাওয়া, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
৪ জনকে ছাঁটাইয়ের পর যে খোলামেলা পরিবেশে কাজের বিজ্ঞাপন গুগল করে আসছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই। কারণ গুগল ঘোষিতভাবে কর্মীদের বাক স্বাধীনতার কথা বলে। কিন্তু ঠিক কতটা কথা বললে, তা সংস্থার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করবে না, সে সম্বন্ধে কোনও নির্দিষ্ট গাইড লাইন নেই। কিন্তু কর্মীদের একাংশের দাবি, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই গাইড লাইন না থাকার সুবিধা নিতে শুরু করেছে গুগল। ফলে সংস্থার গোপনীয়তার কথা বলে আসলে মুখ বন্ধ করা হচ্ছে কর্মীদের। যা গুগলের ঘোষিত নীতির পরিপন্থী। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, গুগলে একসময় অবধি সমস্ত কর্মীদের নিয়ে বৈঠক আয়োজন হত। সেখানে কর্তৃপক্ষকে সাধারণ কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হত। সব সময় যে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যেত, তা নয়, কিন্তু সেই আলোচনা গুগলের খোলামেলা পরিবেশের সমার্থক হয়ে উঠেছিল। সম্প্রতি তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে গুগল একটি পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়োগ করেছে। যারা কর্মীদের জিজ্ঞাসা ঝাড়াই বাছাই করে কয়েক ধাপে পৌঁছে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তার কাছে। কেন সার্বিক আলোচনা বন্ধ করে এজেন্সিকে প্রশ্ন পৌঁছনোর দায়ভার সপে দিল গুগল? তীক্ষ্ণ প্রশ্ন এড়াতে নাকি স্থায়ীভাবে কর্মী ইউনিয়নের পথ বন্ধ করতে, এই প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিনের হাজারো অফিসের আনাচে কানাচে।
নিউইয়র্ক টাইমস সূত্রে খবর, এমাসেই লরেন্স বারল্যান্ড এবং রেবেকা রিভার্সকে অনির্দিষ্টকাল ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। মোট যে চারজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে, বারল্যান্ড এবং রেবেকা তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে বাকি দুজনের হদিশ এখন মেলেনি।

সান ফ্রান্সিসকোয় ভাষণরত লরেন্স বারল্যান্ড

শুক্রবার বারল্যান্ড এবং রেবেকা গুগলের সান ফ্রান্সিসকো অফিসের সামনে জমায়েত করা অন্তত ১০০ জন গুগল কর্মীদের সামনে চাকরি যাওয়ার কারণ তুলে ধরেন। দু’জনেই বলেন, তাঁরা সংস্থার অভ্যন্তরে গুগলের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করেছিলেন। আর যে গোপন নথির কথা বলা হচ্ছে, তা তাঁরা চোখেও দেখেননি।
মার্কিন মুলুকে কর্মীদের অধিকারের কথা বলে গুগল থেকে চাকরি খোয়ালেন ৪ জন। অভিযোগ একইভাবে কগনিজেন্ট থেকে চাকরি গিয়েছে বেঙ্গালুরুর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র এলভারাসনের। এ কীসের ইঙ্গিত? প্রশ্ন এখন এটাই।

Comments are closed.