৮ ই মার্চ, শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পাকিস্তানের সংসদে সভাপতিত্ব করেন সেনেটের প্রথম হিন্দু মহিলা সদস্য কৃষ্ণাকুমারী কোহলি। নারী দিবস উপলক্ষে পাকিস্তান সেনেটের সভাপতি এভাবেই সম্মান জানান কৃষ্ণাকুমারী কোহলিকে। সভাপতিত্বের আসনে বসে কৃষ্ণাকুমারী কোহলি বলেন, এখানে বসতে পেরে নিজেকে বিশাল ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। পাকিস্তান সেনেটের আর এক সদস্য ফয়জল যাদব কৃষ্ণাকুমারীর ভূয়সী প্রশংসা করে একটি ট্যুইট করেন। যা মুহূর্তের মধ্যে মন জয় করেছে নেটিজেনদের।
বহু বছর ধরে মুসলিম প্রধান দেশে হিন্দু শ্রমিকদের অধিকারে লড়াই করছেন কৃষ্ণা কুমারী কোহলি ওরফে আকা কিশুবাঈ। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে প্রথম দলিত হিন্দু মহিলা হিসেবে পাকিস্তান সেনেটে নির্বাচিত হন তিনি।
সংখ্যালঘু ও মহিলাদের অধিকারের দাবিতে বহু বছর ধরে লড়াই করা, কৃষ্ণা কুমারী কোহলির নিজের লড়াইটাও ছিল অভূতপূর্ব। ১৯৭৯ সালে সিন্ধ প্রদেশের ধানাগাম নামে এক অখ্যাত গ্রামে দরিদ্র হিন্দু কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম। ডাকনাম কিশোবাঈতেই পরে বেশি পরিচিতি পান তিনি। পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে প্রায় তিন বছর উমেরকোট জেলার এক বর্ধিষ্ণু ব্যক্তির জমিতে কাজ করতেন কৃষ্ণাকুমারী। তাঁদেরকে অভ্যন্তরীণ জেলে রাখা হত। পরে পাকিস্তান পুলিশের সহযোগিতায় ‘প্রাইভেট জেল’ থেকে মুক্তি পান তাঁরা। এরপর শুরু হয় আর এক লড়াই। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়, মাত্র ১৬ বছর বয়সে কৃষ্ণাকুমারী কোহলির বিয়ে হয়। তবে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন বিয়ের পরেও। সমাজতত্ত্ব নিয়ে এমএ পাশ করেন সিন্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ব রাজনীতি, ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশনের মতো ইস্যু তাঁকে দিনরাত ভাবাতো। রাজনীতিতেও গভীর আগ্রহ তাঁর। ২০০৭ সালে ‘মেহেরগড় হিউম্যান রাইটস’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় যোগ দেন কৃষ্ণাকুমারী কোহলি। শুরু করলেন সংখ্যালঘু হিন্দু শ্রমিক সহ পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য লড়াই। সমাজে মহিলাদের সমান অধিকার ও কর্মস্থলে মহিলাদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন কৃষ্ণাকুমারী। পরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির হয়ে যোগ দেন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। অবশেষে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ পাকিস্তান সেনেটে প্রথম হিন্দু মহিলা হিসেবে জায়গা করে নেন। ২০১৮ সালে বিবিসি’র ১০০ জন ‘inspiring and influential women’এর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন কৃষ্ণাকুমারী কোহলি।
কৃষ্ণাকুমারী কোহলীকে নারী দিবসে সম্মান জানাতে পেরে নিজেও সম্মানিত বলে জানান পাকিস্তান সেনেটের চেয়ারম্যান।
Comments are closed.