শিল্পোৎপাদন তলানিতে, গত ৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সেপ্টেম্বরে

কেমন আছে শ্লথতায় আক্রান্ত নিউ ইন্ডিয়ার অর্থনীতি? একদিকে নেতা-মন্ত্রীরা নিয়ম করে বলছেন, সাময়িক মন্দার প্রকোপ কাটলেই রকেট গতিতে ৫ লক্ষ কোটির ঘোষিত লক্ষ্যের দিকে দৌড় শুরু করে দেবে অর্থনীতি। আর সেই কয়েনেরই উল্টো পিঠে দাঁড়িয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার প্রকোপ কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ৫ ট্রিলিয়ন ইকনমি এখন তাঁদের কাছে কষ্টকল্পনা মাত্র। কে ঠিক, আর কে ভুল সেই তর্কে না গিয়েও বলা যেতেই পারে, দেশের অর্থনীতি কিন্তু বেলাইন হওয়ারই পথে। এবার তা আরও স্পষ্ট হল খোদ সরকারি পরিসংখ্যানে। সোমবার সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস (সিএসও) প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের শিল্পোৎপাদন কমেছে ৪.৩ শতাংশ। এই পতন গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রসঙ্গত, অগাস্টেও তুলনামূলকভাবে শিল্পোৎপাদনের হার কমেছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তা একধাক্কায় কমল ৪.৩ শতাংশ। উৎপাদনের হিসেবের বর্তমান সিরিজটি শুরু হয় ২০১২ সালের এপ্রিলে। সেই হিসেবে গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন শিল্পোৎপাদন গত সেপ্টেম্বরেই।
কী এই শিল্পোৎপাদন? দেশের শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদনের হারকে এককথায় শিল্পোৎপাদন বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কারখানায় উৎপাদন, খনি এবং বিদ্যুতের মতো ক্ষেত্র। সামগ্রিক শিল্পোৎপাদনের হার কমার অর্থ, এই ক্ষেত্রগুলোতে ক্রমেই কমছে উৎপাদনের পরিমাণ। উৎপাদন কমার মূল কারণ, উৎপাদিত সামগ্রী অথবা পরিষেবা গ্রহণ কিংবা কেনার ক্ষমতা হ্রাস।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ জানিয়েছে, দেশে বৃদ্ধির হার আগের চেয়েও কমে যেতে পারে। সিএসও-র রিপোর্টে যেন তারই প্রতিফলন। যদিও এই অবস্থা মোকাবিলায় একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু আখেরে তার কোনও সুফলই ভারতের অর্থনীতিতে পড়েনি। দেশের শিল্পোৎপাদন গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এক ধাক্কায় ৪.৩ শতাংশ কমে যাওয়া অর্থনীতির খারাপ স্বাস্থ্যের দিকেই সরাসরি ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি প্রধান আটটি পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উৎপাদনও কমছে। অগাস্টে কমার হার ছিল -০.৫ শতাংশ, সেখানে সেপ্টেম্বরে তা আরও সঙ্কুচিত হয়ে হয়েছে -৫.২ শতাংশ।
একটা বিষয় স্পষ্ট, লগ্নি না বাড়লে উৎপাদনের হার বাড়বে না। ক্রেতা বা উপভোক্তার পকেটে নগদের টানের ফলে তাঁরা আগের মতো আর খরচ করার পথে যাচ্ছেন না। বরং বলা ভালো, খরচ করার ঝুঁকি নিতে সামগ্রিক অনীহা রয়েছে বাজারে। ফলে উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবা নেওয়ার লোক নেই। ঠিক এই কারণেই নতুন লগ্নির পথেও যাচ্ছেন না উৎপাদকরা। এরই সামগ্রিক ফলাফল অভূতপূর্ব মন্দার প্রকোপ।
তাহলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় কী? অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার আরও কমিয়ে খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদেরই আর একটি অংশ একে সাময়িক স্বস্তির লক্ষ্যে সংশয়ী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করছেন। অর্থনীতির হাল ফেরাতে কী করবে কেন্দ্র? এখন সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Comments are closed.