এনআরসি’র বিরোধিতা, আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংস্থার অভিযোগে অসমের ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের!
ফের কি রাজরোষে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ? সূত্রের খবর, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অসম সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, সেই রাজ্যের ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, আরএসএস ঘনিষ্ঠ লিগাল রাইটস অবজার্ভেটরির অভিযোগের ভিত্তিতেই অসম সরকারকে এই নির্দেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।
আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংস্থাটি মূলত মহারাষ্ট্রের হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্বেও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক উসকানিতে নাম জড়িয়েছে লিগাল রাইটস অবজার্ভেটরির। সেই সংগঠনের কর্তা বিনয় জোশী সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অভিযোগ জানান, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে গুয়াহাটির ৫ টি সংবাদসংস্থা এবং ৪ জন সাংবাদিক মাত্রাছাড়া বিরোধিতার পথ নিচ্ছেন। কোন স্বার্থে তাঁদের এমন বিরোধিতা? অভিযোগপত্রে আরও লেখা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের এমন উচ্চকিত বিরোধিতা ইন্ধন যোগাচ্ছে আলফার মত বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিকে। তাই এঁদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হোক, এই মর্মে আবেদন জানিয়েছেন বিনয় জোশী।
অসমের প্রতিদিন টাইম নামে নিউজ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক নিতুমনি সইকিয়া, অসমিয়া প্রতিদিন সংবাদপত্রের সম্পাদক মনজিত মোহন্ত, অসমের স্থানীয় নিউজ চ্যানেল প্র্যাগ নিউজের এডিটর অজিতকুমার ভুঁইঞা এবং নিউজ পোর্টাল ইনসাইড এনই-র এডিটর আফ্রিদা হোসেন, এই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করার কথা বলা হয়েছে অভিযোগ পত্রে। এই চার সাংবাদিকই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি, অসমের বিজেপি সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়েও এই সাংবাদিকরা সমালোচনা জারি রেখেছেন। বিশেষ করে অসম সরকারের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের মাধ্যমে অসমীয়া সংস্কৃতিকে বদলে দেওয়ার চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন এই সাংবাদিকরা।
তবে এমন কোনও নির্দেশের কথা তারা জানেন না বলে অসম পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংগঠনটি এর আগেও উত্তর-পূর্বে বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ অসমের সংবাদমাধ্যমের একাংশের। মেঘালয়ের বিভিন্ন ক্রিশ্চান মিশনারি এবং চার্চের বিরুদ্ধেও একের পর এক অভিযোগ করেছিল সংগঠনটি। মেঘালয়ে একটি ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পোপ ফ্রান্সিসকেও ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছিল আরএসএস ঘনিষ্ঠ লিগাল রাইটস অবজার্ভেটরি। সেই ঘটনায় সারা দেশে সাড়া পড়ে যায়। মুম্বই প্রেস ক্লাবের সভাপতির বিরুদ্ধে মাওবাদী যোগের ভুয়ো অভিযোগ তুলেছিল লিগাল রাইটস অবজার্ভেটরিই। বিনয় জোশীর বক্তব্য, অসমেও ঠিক একই জিনিস চলছে। তাঁর অভিযোগ, মুম্বইয়ে যেমন মাওবাদীরা টাকা দিচ্ছে সাংবাদিকদের, ঠিক তেমনই অসমে সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের টাকায় সংসার চলছে সাংবাদিকদের।
বিনয়ের চিঠির প্রেক্ষিতে যে ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তাঁরা অবশ্য এনিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। গোটা ঘটনাটিকে চাপের কৌশল বলে মন্তব্য করে সাংবাদিকের দাবি, অসমের মানুষ বিলের বিরুদ্ধে, এভাবে জোর করে তা কোনও মূল্যেই চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষের কথা আমরা সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরবই।
Comments are closed.