কে এই ‘সিঙ্গম’ আইপিএস অফিসার জ্যোতিষ চন্দ্র, যিনি সাবরীমালায় সিপিএম সরকারের নির্দেশ মেনে ডিউটি করে কেন্দ্রের রোষানলে
জ্যোতিষ চন্দ্র। কর্ণাটক ক্যাডারের এই আইপিএস অফিসার এখন কেরলে খবরের শিরোনামে। কেরলের সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রোষানলে পড়েছেন এই তরুণ আইপিএস অফিসার। তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু কুছ পরোয়া নেই। চাকরি জীবনে বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা জ্যোতিষ চন্দ্র কর্তব্যে অবিচল। তিনিই সিপিএম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তাঁরও ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। আর এই ডাকাবুকো আইপিএস অফিসারকেই সাবরীমালা মন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছেন পিনারাই বিজয়ন।
ঘটনার সূত্রপাতগত বুধবার। সাবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার পথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পন রাধাকৃষ্ণণের পথ আটকান ত্রিশূরের পুলিশ সুপার জ্যোতিশ চন্দ্র। সরাসরি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে। এর পর থেকেই কেরলের ওই সাহসী আইপিএস অফিসারকে ঘিরে চর্চা শুরু হয়ে যায়। মন্দিরের কাছেই মন্ত্রীর গাড়ি আটকান তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এর বেশি আর এগনো যাবে না। সেই সঙ্গে দুই বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তারও করেন। পন রাধাকৃষ্ণণ অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী। সাবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অনেক বিজেপি কর্মী। মন্ত্রীর সামনে পুলিশকে জোড়হাত অবস্থায় দেখতেই অভ্যস্ত মানুষ। কিন্তু জ্যোতিশ চন্দ্রকে দেখা গেল একেবারেই অন্য মেজাজে। পরে তিনি জানান, ‘ডিউটির সময় আবার মন্ত্রী কী?’
এরপরই তাঁকে নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। জ্যোতিশ চন্দ্রের মতো নির্ভীক, স্পষ্টবাদী পুলিশ অফিসারের কাজে মুগ্ধ তাঁর সহকর্মী থেকে শুরু করে কেরল পুলিশ, এমনকী সাধারণ নাগরিকরাও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পন রাধাকৃষ্ণণের সঙ্গে আইপিএস অফিসার জ্যোতিশ চন্দ্র অভব্য ব্যবহার করেছেন, এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজেপি নেতা শ্রীধরণ পিল্লাই কেন্দ্রে চিঠি পাঠান। কিন্তু কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এই আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা তো নেনইনি, তাঁর পদক্ষেপকে সমর্থন এবং তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
প্রসঙ্গত, ভি এস অচ্যুতানন্দন এই আইপিএস অফিসারকেই পাগল কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তিনি আঙ্গামালিতে সিপিএম কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করার পর। এরপরই বিশ্বসভারায় টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জ্যোতিশ চন্দ বিতর্কের মধ্যমণি হয়ে ওঠেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর নামে ফ্যান পেজ চালু হয়েছিল, যার নাম ছিল ‘সিঙ্গম’। যেটি আসলে একটি ফিল্মের নাম, আর ওই ছবিতে তামিল অভিনেতা সূর্য এক সাহসী ও কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।
২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে তিনি মানবাধিকার কমিশনের তদন্তের মুখে পড়েছিলেন। ৭ বছরের একটি শিশু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, জ্যোতিষ চন্দ্র তাকে আঘাত করেছেন। আইপিএস অফিসার জ্যোতিশ চন্দ্র তখন কোচি সিটির ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। সেদিনও ব্যাপক সমালোচনা হজম করতে হয়েছিল তাঁকে। এর আগে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফিটনেস চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে একটি ভিডিও অনলাইনে পোস্টও করেছিলেন।
জ্যোতিশ চন্দ্রর জন্ম কর্ণাটকের দাভঙ্গেরে জেলায়। স্কুলে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি পুলিশ অফিসারের সাহসিকতার কথা শুনতে পছন্দ করতেন। প্রথম থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন আইপিএস অফিসার হওয়ার। স্কুলের পড়াশোনা শেষে তিনি বাপুজি ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হন। তারপর সিভিল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১০ সালে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
Comments are closed.