বিজেপির চাপে আহমেদাবাদের আর্টস কলেজে বাতিল জিগনেশ মেভানির সভা, প্রতিবাদে ইস্তফা অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষের
আহমেদাবাদের এইচ কে আর্টস কলেজ অডিটোরিয়ামে রাজ্যের বিধায়ক তথা দলিত নেতা জিগনেশ মেভানির সভা বাতিলের প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন অধ্যক্ষ ও সহকারী অধ্যক্ষ। সভা বাতিলের জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন অধ্যক্ষ।
গত সোমবার এইচ কে আর্টস কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল রাজ্যের বিজেপি বিরোধী মুখ জিগনেশ মেভানিকে। কিন্তু ওই কলেজ পরিচালনাকারী ব্রহ্মচারী ওয়াদি ট্রাস্ট দলিত নেতার উপস্থিতি মেনে নেয়নি। যে অডিটোরিয়ামে গুজরাতের এই দলিত নেতার সভার আয়োজন করা হয়েছিল, সেই অডিটোরিয়ামে সভা করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে তারা।
ট্রাস্টের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হন কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত কুমার শাহ ও সহকারী অধ্যক্ষ মোহনভাই পারমার। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার দু’জনেই পদত্যাগ করেন।
অধ্যক্ষ হেমন্ত কুমার শাহ তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তথা বর্তমান বিধায়ক জিগনেশ মেভানিকে তিনি কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকজন পড়ুয়া তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তাঁদের মত ছিল, দলিত নেতা জিগনেশ কোনও জাতি সংক্রান্ত বিতর্কিত মন্তব্য করতে পারেন অনুষ্ঠানে। শুধুমাত্র এই ভয়ে কলেজ পরিচালনাকারী ট্রাস্ট তাঁর সভা বাতিল করে বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের। যদিও এর পিছনে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদত আছে বলে অভিযোগ একাংশের।
হেমন্ত কুমার শাহ পদত্যাগপত্রে লেখেন, তিনি বিশ্বাস করেন প্রত্যেকেরই স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। জিগনেশ মেভানিও তার ব্যতিক্রম নন। কিন্তু যেভাবে কলেজ ট্রাস্ট বিজেপির চাপে জিগনেশের সভা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অসাংবিধানিক। কলেজ ট্রাস্টিকে একহাত নিয়ে অধ্যক্ষ হেমন্ত কুমার শাহ লিখেছেন, রাজনৈতিক দলের দাসত্ব করা প্রতিষ্ঠানে থাকতে চান না তিনি, তাই এইচ কে আর্টস কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন।
১২ই ফেব্রুয়ারি নিউজ পোর্টাল ‘THE WIRE’ এ হেমন্ত কুমার শাহ একটি কলাম লেখেন। ‘Why I Resigned As Principal of HK Arts College After Jignesh Mevani Was Disinvited’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, বিজেপির ছাত্র নেতাদের কাছে নতি স্বীকার করেছে বহ্মচারী ওয়াদি ট্রাস্ট। বিজেপির দাবি মেনে জিগনেশ মেভানির সভা বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
নিজের লেখায় বিজেপির সমালোচনা করেছেন হেমন্ত কুমার শাহ। তিনি লিখেছেন, কয়েক মাস আগে আহমেদাবাদের কর্ণবতী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যদি অমিত শাহের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কলেজ ক্যাম্পাসে বক্তব্য রাখতে পারেন, তাহলে বিধায়ক জিগনেশ মেভানি কেন বক্তব্য রাখতে পারবেন না? তিনি লেখেন, এর আগে ওই এইচ কে আর্টস কলেজ ক্যাম্পাসেরই একটি আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাহলে মেভানির ক্ষেত্রে কী সমস্যা হল?
বিশিষ্ট মানুষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করার পর তা বাতিল করার বেশ কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরে নিজের কলামে হেমন্ত কুমার শাহ লিখেছেন, স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ বন্ধ করতে এই দমনমূলক কাজকর্ম অভিপ্রেত নয়।
Comments are closed.