দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে ডিওয়াইএফআই-এর মহিলা সদস্যের আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল কেরল সিপিএম
একেই সাবরীমালা ইস্যুতে কেরলে খানিকটা বেকায়দায় সিপিএম সরকার। তারই মধ্যে দলের এক বিধায়কের বিরুদ্ধে যুব শাখা ডিওয়াইএফআই-এর এক মহিলা সদস্যের আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে জেরবার অবস্থা সিপিএমের। গোটা ঘটনাটি এই মুহূর্তে কেরল সিপিএমের অন্দরে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে বিজেপি লাগাতার সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে।
বিষয়টি এত দূর গড়িয়েছে, অভিযুক্ত সিপিএম নেতা এবং বিধায়ককে দল থেকে বহিষ্কার করার দাবি তুলেছেন কেরলের বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী সারা জোসেফ। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত বিধায়ককে বহিষ্কার না করা হলে সাবরীমালা ইস্যুতে আগামী ১ লা জানুয়ারি সিপিএমের মহিলা ফ্রন্টের পক্ষ থেকে যা মানব প্রাচীন গড়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি থাকবেন না। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে সারা জোসেফ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাহিত্য আকাডেমি পুরস্কার ফেরত দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে সারা আম আদমি পার্টিতে যোগদান করেন।
ঘটনার সূত্রপাত এবছর অগাস্ট মাসে। গত অগাস্ট মাসে কেরল সিপিএমের যুব শাখা ডিওয়াইএফআই-এর এক মহিলা সদস্য দলীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেন, দলের নেতা তথা শরনুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক পি কে শশী তাঁর সঙ্গে একাধিকবার অভব্যতা ও তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন। অভিযোগকারী ওই যুবতী আরও দাবি করেন, পালাক্কাডের মান্নারকাড এলাকার পার্টি অফিসেও তাঁকে একা পেয়ে হেনস্থা করেছেন ওই সিপিএম বিধায়ক, এমনকী ফোনেও কুকথা বলেছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে পি কে শশীর বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু করে সিপিএম। রাজ্যের আইনমন্ত্রী এ কে বালান ও সাংসদ পি কে শ্রীমাথি ছিলেন ওই তদন্ত কমিটির সদস্য।
সূত্রের খবর, তদন্ত শেষে তাঁরা সম্প্রতি যে রিপোর্ট দলকে জমা দিয়েছেন সেখানে বলা হয়েছে, অভিযোগকারিনীর সঙ্গে পি কে শশী অভব্যতা বা তাঁকে যৌন হেনস্থা করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ বা তথ্য পাওয়া যায়নি। বলা হয়েছে, দলীয় অফিসে যে সময় শশী ওই মহিলাকে যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই সময় রোজই প্রচুর ভিড় থাকতো দলীয় দফতরে। তাছাড়া শশীর ঘরের দরজা সব সময় খোলাই থাকতো। যে সময় এই ঘটনা ঘটেছে বলে ডিওয়াইএফআই সদস্যা জানিয়েছেন, তার বহু পরে তিনি অভিযোগ করেছেন। তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মহিলা অভিযোগ করেছিলেন, মুখ বন্ধ রাখার জন্য পি কে শশী তাঁকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসলে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের এক কর্মসূচির জন্যই ওই টাকা মহিলার হাতে দেন অভিযুক্ত বিধায়ক। রিপোর্টে ঘুরিয়ে অভিযোগকারীর দিকেই আঙুল তুলে বলা হয়েছে, গোটা বিষয়টি তিনি সোশ্যালাইজ করছেন, অর্থাৎ নজরে আসার চেষ্টা করছেন।
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক পি কে শশীও। তবে গত ২৬ নভেম্বর দলীয় নেতৃত্বের কাছে জমা পড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফোনে ওই মহিলাকে কিছু অসংলগ্ন কথা বলেছিলেন ওই বিধায়ক, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফোনে ওই মহিলাকে পি কে শশী নাকি বলেছিলেন, ‘তোমার প্রতি আমি অদ্ভুত এক আকর্ষণ বোধ করি। আমি যখন তোমায় সম্মান করি, তখন পরস্পরকে স্পর্ষ করলে দোষের কী আছে’!
এই রিপোর্ট জমা পড়ার পর সম্প্রতি ছ’মাসের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে পি কে শশীকে। দলের তরফে বলা হয়েছে, যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রমাণ তাঁর বিরুদ্ধে পাওয়া যায়নি। কিন্তু ফোনে তিনি যেভাবে কথা বলেছেন, তা একজন রাজনীতিকের শোভা পায় না, তাই সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন দলের এই সিদ্ধান্তে খুশি নন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিকে চিঠি লিখে অভিযোগের আরও তদন্তের দাবি করেছেন।
সম্প্রতি কেরল সিপিএমের শশীকে নিয়ে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিশিষ্ট লেখক সারা জোসেফ জানিয়েছেন, আগামী ১ লা জানুয়ারি থেকে সাবরীমালা ইস্যুতে মহিলা প্রাচীর গড়ার যে কর্মসূচি দলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে তাতে তিনি অংশ নেবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত শশীকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এক বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা এই যৌন হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে দলের মধ্যে চাপান-উতোর সৃষ্টি হয়েছে। যথেষ্টই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে কেরল সিপিএমের অন্দরে। তার মধ্যে সাবরীমালা ইস্যুতে মহিলাদের অধিকারের প্রশ্নে বলিষ্ঠ অবস্থান নেওয়া সিপিএম কেন দলের মধ্যেই কোনও মহিলার অভিযোগের ক্ষেত্রে কেন কড়া অবস্থান নিচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
Comments are closed.