আঙ্কারা, ইস্তানবুল সহ তুরস্কের একাধিক শহরে বামপন্থীদের জয়, বড় হারের মুখে জাতীয়তাবাদী এর্ডোগানের দল

তিনি না থেকেও আছেন প্রবলভাবে। কেমাল আতার্তুর্কের রিপাবলিকান পিপলস পার্টি বা সিএইচপি-র কাছে তুরস্কে পর্যুদস্ত হতে চলেছে জাতীয়তাবাদী রিসেপ তায়েপ এর্ডোগানের দল! তুরস্কে মেয়র নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল দেখে এমনই মনে করা হচ্ছে।
৩১ শে মার্চ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তানবুল সহ দেশের একাধিক শহরের মিউনিসিপালিটিতে অনুষ্ঠিত হয় মেয়র নির্বাচন। আনুষ্ঠানিকভাবে সেই ভোটের ফল এখনও পুরোপুরি প্রকাশ না পেলেও বেসরকারি সূত্রের খবর, এর্ডোগানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি বা একেপি একের পর এক বড় শহরে হারছে। ইতিমধ্যেই ক্ষমতাসীন একেপি’র হাতছাড়া হয়েছে তুরস্কের তিনটি বড় শহর ইস্তানবুল, আঙ্কারা এবং ইজ়মির। দেশজুড়ে দুরন্ত ফল করে এর্ডোগানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে কেমাল আতার্তুর্কের সোশ্যাল ডেমক্রাট রিপাবলিকান পিপলস পার্টি বা সিএইচপি। তুরস্কের একাধিক শহরে দীর্ঘদিন বাদে জয় বামপন্থীদের।
দশকের সবচেয়ে বড় আর্থিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তুরস্কের অর্থনীতি। ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি ডলারের তুলনায় তুরস্কের লিরার অবমূল্যায়ন নতুন রেকর্ড গড়েছে সে দেশে। একই সঙ্গে মাথাচাড়া দিয়েছে বেকারত্বের সমস্যা। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে রিসেপ তাইপ এর্ডোগানের সরকারের উপর। এই পরিস্থিতিতেই স্থানীয় ভোটে যায় একে পার্টি। আশা ছিল, জাতীয়তাবাদের তুফান তুলে ভোট বৈতরনি পেরনোর। কিন্তু রবিবাসরীয় ভোটের ফলে বোঝা যাচ্ছে, জাতীয়তাবাদের অস্ত্রেই পাল্টা ঘায়েল হয়েছেন এর্ডোগান। আঙ্কারা, ইস্তানবুল সহ একাধিক শহরে জিতছেন বামপন্থীরা।
তুরস্কের জাতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনাদোলু’র অসমর্থিত সূত্রের খবর, দেশের সবচেয়ে বড় শহর তথা দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ইস্তানবুলে আতার্তুর্কের রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রার্থী, বামপন্থী একরেম ইমামোগলু মেয়র পদে ৪৮.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়ে দিয়েছেন এর্ডোগানের দল একেপি’র প্রার্থী বিনালি ইয়েলদিরিমকে। অন্যদিকে, রাজধানী আঙ্কারায় সিএইচপি-র মনসুর ইয়াভাস বিশাল ভোটে হারিয়েছেন একেপি’র মেহমেট ওজ়াসেকিকে। একই অবস্থা তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজ়মিরেও। সেখানেও এর্ডোগানের দলকে হারের মুখে পড়তে হয়েছে।
স্থানীয় নির্বাচনের ফল যে তাঁর পার্টির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, সম্ভবত এমনটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন এর্ডোগান। রবিবার ভোট চলাকালীনই তিনি বিবৃতি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন, ফল যেমনই হোক, সংস্কারের পথ থেকে সরবে না তাঁর সরকার। কিন্তু ভোট শেষে সেই একেপি তুলছে কারচুপির অভিযোগ। সেই অভিযোগ সরকারিভাবে নথিভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে একেপি’র কাছে। সমস্ত অভিযোগের নিষ্পত্তির পরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হবে স্থানীয় ভোটের ফল।
প্রচারে সিএইচপি হাতিয়ার করেছিল দেশের মানুষের আবেগকে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পতাকার বদলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়েছিল দেশের জাতীয় পতাকা। তার পাল্টা হিসেবে খাবারে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছিল এর্ডোগান সরকার। কিন্তু কাজে এল না সেই কৌশল। দেশের প্রায় সমস্ত শহরে ভরাডুবির মুখে পড়ল ক্ষমতাসীন একেপি।

Comments are closed.