সুইডেনের এক ১৬ বছরের স্কুল পড়ুয়া, গ্রেটা থানবার্গ। কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতি শুক্রবার সে ধরনায় বসেছিল সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে। তার দাবি ছিল বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে সবাইকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পরিবেশ সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি মানতে হবে। খুদে স্কুল পড়ুয়ার এই আন্দোলন নজর কাড়ে সুইডেনবাসীর। গ্রেটার এই আন্দোলন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর, অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
এখন ইউরোপের প্রায় ২৭০টি শহরে ৭০ হাজারের বেশি স্কুল পড়ুয়া এই পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সামিল হয়েছে। তাদের হাতে পোস্টারের ট্যাগ লাইন #ফ্রাইডে ফর ফিউচার।
গ্রেটা থানবার্গের এই আন্দোলনে প্রথম সাড়া ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়ায়। গত ডিসেম্বর মাসে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী পরিবেশ রক্ষার মিছিলে যোগ দিয়েছিল। ক্রমে এই আন্দোলনের স্রোত ছড়িয়ে পড়ে বেলজিয়াম, সুইটজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা, ব্রিটেন ও কানাডায়। এখন আফ্রিকা ও দক্ষিন আমেরিকার খুদে পড়ুয়ারাও গ্রেটা থানবার্গের আন্দোলনে সামিল হয়েছে।
১৫ই ফেব্রুয়ারি ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের পড়ুয়ারা স্কুল বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। ছাত্র-ছাত্রীদের এই কর্মসূচীকে সাধুবাদ জানিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা, একাধিক স্বেছাসেবী সংস্থা ও ছাত্র সংগঠনও যুক্ত হয়েছে এই আন্দোলনে।
পুঁজিবাদী শক্তির আগ্রাসন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে মাতোয়ারা দেশগুলির রাজনৈতিক নেতারা যখন পরিবেশ নিয়ে নিয়ে বিশেষ ভাবিত নন, তখন আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও সবুজ পরিবেশ দিতে বদ্ধপরিকর আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি লন্ডন, এডিনবার্গ, কার্ডিফ, বেলফাস্ট, কেমব্রিজ, ব্রাইটন, ম্যাঞ্চেস্টার সহ ব্রিটেনের প্রায় ৬০ টি শহরে স্কুল বন্ধ করে পথে নামে পড়ুয়ারা। স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে লন্ডনের রাজপথে খুদেদের মিছিলের জেরে থমকে যায় ট্রাফিক। মিছিল যাওয়ার পথ করে দিতে দেখা যায় সাধারণ মানুষদের। অন্তত ঘণ্টাদুয়েক বন্ধ ছিল ওয়েস্টমিনস্টারমুখী সবকটি রাস্তার যান চলাচল। সেই বিক্ষোভের আঁচ গিয়ে পড়ে ডাউনিং স্ট্রিটেও।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে অবশ্য এই আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, স্কুলে না গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলন তাদের পড়াশুনোর ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপরও চাপ বাড়ছে। নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ছাত্র-ছাত্রদের উচিত স্কুলে যাওয়া বন্ধ না করা।
যদিও থেরেসা মের বিরোধিতা নিয়ে চিন্তিত নয় খুদেরা। তাদের বার্তা, যদি সুস্থ্য পরিবেশই না থাকে তবে পড়াশুনো শিখে কী লাভ ? প্রয়োজনে ফের ডাউনিং স্ট্রিট অভিযান হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
পড়ুয়াদের ব্যানারে লেখা, গোটা পৃথিবীটাই যখন দূষিত, তখন নিজের ঘর পরিচ্ছন্ন রেখে কী লাভ? আবার কোথাও লেখা শিক্ষাব্যবস্থাই অপ্রয়োজনীয়, যদি ভবিষ্যতই না সুরক্ষিত থাকে।
ক্লাসে না গিয়ে খুদে পড়ুয়াদের পথে নেমে এই আন্দোলন যে জোর ঝাঁকুনি দিয়ে গেল সরকারকে তা নিয়ে সংশয় নেই পরিবেশবিদদের। কিন্তু সরকারের টনক নড়বে কি? প্রশ্ন এখন এটাই।
Comments are closed.