স্বাধীনতা দিবসেই নবান্ন বনাম রাজভবন বিতর্ক এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছল। এবার রাজ্যপাল ধনখড় তুললেন রাজভবনের উপর নবান্নের নজরদারি চালানোর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ।
গোলমালের সূত্রপাত স্বাধীনতা দিবসে রাজভবনে চা-চক্র নিয়ে। স্বাধীনতা দিবসের চা-চক্রে যোগ দেবেন না বলে শনিবার দুপুরে রাজভবনে গিয়ে ঘণ্টাদেড়েক রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানিয়েছিলেন, বিকেলের অনুষ্ঠানে আসতে পারব না, তাই আমরা আগে ঘুরে গেলাম। আড্ডা দিয়ে গেলাম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকেন রাজ্যপাল ধনখড়। এই সময় তিনি অভিযোগ করেন, রাজভবনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যের পদস্থ অফিসারদের দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। যা শুনে হতবাক রাজনৈতিক মহল।এবার রাজ্যপালের অভিযোগের পাল্টা কটাক্ষ মিশ্রিত জবাব এলো তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কাছ থেকে। রাজ্যপালকে ‘আঙ্কলজি’ সম্বোধন করে কৃষ্ণনগরের সাংসদের ট্যুইট, নজরদারির ব্যাপারটা আপনার গুজরাতের ‘বস’ ভালো জানেন। এ ব্যাপারে আমরা নিতান্তই শিক্ষানবীশ।
স্বাধীনতা দিবসে রাজভবনের চা-চক্রের অনুষ্ঠানে সাধারণত মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকরা উপস্থিত থাকেন। আমন্ত্রিত হন বিরোধী নেতৃত্ব। কিন্তু করোনা আবহে শনিবার বিকেল পাঁচটায় এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরেই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সারেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ও স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন ব্যানার্জি। স্বভাবতই বিকেলের চা চক্রে আর উপস্থিত হননি মুখ্যমন্ত্রী।
সন্ধ্যার চা-চক্রে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ফাঁকা আসনের ছবি ট্যুইটারে পোস্ট করে রাজ্যপাল ধনখড় লেখেন, ফাঁকা আসনটি থেকেই স্পষ্ট, একটা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা বাংলার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং নৈতিকতার সঙ্গে খাপ খায় না। এই অনাবশ্যক অবস্থানের স্বপক্ষে কোনও যুক্তিই খাটে না।
চা-চক্রে না থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনিক আধিকারিকরা যে খারাপ নজির গড়েছেন, সংবিধান মেনে চলছেন না, এমন একাধিক অভিযোগও তোলেন রাজ্যপাল। তবে এখানেই শেষ নয়, সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বিস্ফোরক অভিযোগ, রাজভবনের কেউ তলে তলে নবান্নের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাই রাজভবনের অন্দরের সব কথা রাজ্য সরকারের কাছে চলে যাচ্ছে। তাঁর দাবি, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই তদন্তে যার নাম উঠে আসবে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আর একটি ট্যুইটে মহুয়া প্রকাশ্যে আনেন রাজভবনের চা-চক্রে আমন্ত্রিতদের তালিকা। তাঁর প্রশ্ন, অতিমারি পরিস্থিতির মধ্যে চা-চক্রের যৌক্তিকতা নিয়ে। ট্যুইটে তিনি লেখেন, করোনা পরিস্থিতিতে রাজভবনের চা চক্রে আমন্ত্রণ পাওয়া ৯৬ জন ভাগ্যবানের তালিকা (এর সঙ্গে অন্যান্য কর্মী, নিরাপত্তারক্ষী ও কেটারিং-এর লোকজন অতিরিক্ত)।
রাজ্যপালকে আক্রমণ করে মহুয়ার কটাক্ষ যে আসলে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে, তা ট্যুইটে স্পষ্ট বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। যদিও রাজভবন বা রাজ্যপাল ধনখড়ের তরফে এর জবাবে কিছু বলা হয়নি।
Comments are closed.